Saturday, August 11, 2018
আম্রিকা দর্শন পর্ব ৮
আমি বেশ চিল্ড আউট পাবলিক। বিকেলে আমার পোস্টার প্রেজেন্টেশন। সেই নিয়ে কোন তাপ উত্তাপ নেই। দিব্যি সকালবেলা আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে উঠলাম। ইতিমধ্যে দেখি সুজাতা উঠে পড়েছে। ধীরেসুস্থে ফোন পর্ব শেষ করে স্নান টান সেরে যখন বেরোলাম, দেখি সুজাতা ইতিমধ্যে আমার আর ওর জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করে ফেলেছে। বেগেল টোস্ট, সাথে চীজ স্প্রেড আর অনেকটা ডিম ভাজা। যেহেতু টেট্রাপ্যাকের ডিম আর বাসনেরও অভাব ছিল, ব্যাপারটা অমলেট বা পোচ না হয়ে তৈরি হল ওই অলমোস্ট স্ক্র্যাম্বল্ড এগস। খেয়ে দেয়ে গেলাম কপ্লি প্লেসের ম্যারিওটে। সারাদিন বেশ বোরড হলাম। আমার না লেকচার টেকচার শুনলে বড্ড ঘুম পায়। খুব কষ্ট করে জেগেছিলাম। দুপুরে কনফারেন্সেই লাঞ্চ দিয়েছিল। চিকেন স্যান্ডুইচ, আপেল, কুকি, চিপস আর ড্রিঙ্কস। অল্পবিস্তর খাওয়াদাওয়া করে আমি একটু লবিতে রইলাম। ফোনে প্রেজেন্টেশনটা দেখে টেখে একটু মেন্টাল প্রিপারেশন নেওয়া আর কি। সময় মতো পোস্টার সেশন শুরু হল। শেষও হল। কিছু অতি উৎসাহী মানুষজন এলেন। তাঁদের আমার কাজ সম্পর্কে বললাম। ব্যস, মিটে গেল কাজের কাজ। এইবার শুধুই ভ্রমণে মন দেওয়া যাবে।
বেরোতে বেরোতেই প্রায় সাতটা হয়ে গিয়েছিল। আমরা হাঁটতে হাঁটতে হেলতে দুলতে রওনা দিলাম আমাদের থাকার জায়গার উদ্দেশ্যে। পথে পড়ল বিখ্যাত চীজকেক ফ্যাক্টরি। এই দোকানের চেনটি গোটা অ্যামেরিকা জুড়ে আছে। এখন তো বোধহয় অন্যান্য কিছু দেশেও খুলেছে ব্রাঞ্চ। চীজকেক ফ্যাক্টরির বৈশিষ্ট্য কি কিছু আছে? তেমন না। শুধু এই যে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন ফ্লেভারের অনন্য স্বাদের (এবং অবধারিতভাবে প্রচণ্ড পরিমাণে ক্যালরিযুক্ত) পরম সুস্বাদু চীজকেক। এ ছাড়াও আরো অন্যান্য খাবার আইটেমও পাওয়া যায় অবশ্যই। আমরা যারা খুব জনপ্রিয় টিভি সিরিজ দ্য বিগ ব্যাং থিওরি দেখে আনন্দ পাই, তাদের কাছে দ্য চীজকেক ফ্যাক্টরির আলাদা টান, কারণ এখানেই সিরিজের প্রিয় ক্যারেক্টাররা মাঝে মাঝেই এসে খেতেন, মঙ্গলবার করে। আমরা তো দুজনে ঢুকলাম দোকানে। দাম দেখে একটু ছ্যাঁকা খেলাম। তবে সুজাতার অবস্থা আমার চেয়ে বেটার, ও স্টাইপেন্ড পায় ডলারে। আমার মতো প্রতিবার এক ডলার মানে তখন উনসত্তর যাচ্ছে, এরকম ভাবতে হচ্ছেনা। ওই বলল, এটা ওর ট্রিট। আমার অ্যামেরিকা আসাকে সেলিব্রেট করতে। লেমন চীজকেক পছন্দ করে নিলাম। দাম খেয়াল নেই, তবে ওই টিপস দিয়ে টিয়ে প্রায় কুড়ি ডলারের কাছাকাছিই হবে। বেশ বড় পিস, দুজনে মিলে আরাম করে খাওয়া যায়। আর সাথে প্রচুর চেরি দেওয়া। ফেরার পথে রাস্তায় একটা বিশাল বিল্ডিং ছিল, কীসের কী, জানিনা। আন্ডার রেনোভেশন ছিল। তার সামনে বেশ বড় একটা ফোয়ারা ছিল। সেখানে বাচ্চারা ছোটাছুটি করে খুব মজা করছিল দেখলাম। আমরা ধারে বসলাম খানিক। একটু চিজকেক খেলাম। বাইরে তখন রোদ পড়ে আসছে। ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে সাতটা বেজে গিয়েছে। ডেজারট গুছিয়ে রেখে হাঁটা লাগালাম। গতকালের ওই জঘন্য চাইনিজ ডিনারের পর ইচ্ছে ছিল আজ রাত্রে ভালো কিছু খেতে হবে। তাই গেলাম ক্যুডোবা নামের এক মেক্সিকান রেস্টুরেন্টে। মেনু দেখে আমার তো ওই ভগবান জানে এসব কী, খায় না মাথায় দেয় অবস্থা। সুজাতার জিম্মায় ছেড়ে দিলাম অর্ডার করার দায়িত্ব। আমরা নিলাম চিকেন বারিটো রাইস বোল। বানালো আমাদের সামনে। কিছুই না। ওই রাজমা চাউলকে বিদেশি নাম ও সাজ দেওয়া। রাজমা, ভাত এর সাথে কিছু টক ঝাল সস, প্রচুর শসা পিঁয়াজ ও টমেটো মিশিয়ে একটা চাট চাট ব্যাপার। ভিতরে মাংসের টুকরো ভালো মতোই। খেয়েদেয়ে ফিরলাম বাড়ি। পরেরদিন সুজাতার প্রেজেন্টেশন। ও খুব সিরিয়াস এইসব ব্যাপারে।আমি ভাবতে বসলাম আমার দিনপঞ্জি কী হতে পারে। বস্টনে ঘোরার মতো খুব বেশি কিছু নেই। তাও তার মধ্যে যা যা দেখার আছে, সেখান থেকে কিছু একা একা ঘুরে নেওয়া যায় কি না।
আমার আই আই টির জ্যুনিওর দেবজ্যোতি হার্ভার্ডে পি এইচ ডি করছে। ওকে বলে রেখেছিলাম আমায় হার্ভার্ড ঘোরাতে। বস্টন এসে ওই পাড়ায় না যাওয়াটা পাপ। ওকেই তাই জিজ্ঞেস করলাম মেসেজ করে। পরেরদিন ওর কী প্ল্যান প্রোগ্রাম। বলল লাঞ্চ টাইমে চলে এসো। ব্যস। আমারও প্ল্যান সেট। কোনমতে ঘুমোতে ঘুমোতে প্রথম সেশন কাটালাম কনফারেন্সে। সুজাতার ল্যাপটপটা বিগড়েছিল। ও মাঝপথেই ছুটল অ্যাপল স্টোরে। আমি লিফট শেয়ার ডেকে রওনা দিলাম কেম্ব্রিজের দিকে। বস্টন আর কেম্ব্রিজ (যেখানে হার্ভার্ড), আমাদের হাওড়া কলকাতার মতোই। গঙ্গার বদলে চার্লস নদী।
ইউ এসে যেটা এই দুদিনেই বুঝে গিয়েছিলাম, মানুষজনের সৌজন্যবোধটা খুব বেশি। ক্যাবেই যাও কী দোকানে, প্রথমেই হাই, হাউ আর ইউ যেন বলতেই হবে। সাথে অবশ্যই চওড়া হাসি। আমিও ক্যাবে উঠে চালককে হাই হ্যালো করলাম। ভদ্রমহিলা চালক। মাঝবয়সী। দারুণ লাগল ব্যাপারটা দেখে। ভারতে তো কোনদিনও এমন দেখিইনি। অথচ মার্কিনে বেশ কয়েকবার মহিলা চালিত শেয়ার ক্যাব দেখলাম। ঝলমলে আকাশ। রোদ। ট্র্যাফিক তেমন বেশি না। আমি একটু ভদ্রমহিলার সাথে গল্প করার চেষ্টা করলাম। আহা কী সুন্দর ওয়েদার বলে টলে। তবে দেখলাম উনি হয়ত স্বচ্ছন্দ নন। আমিও চুপচাপ জানালর বাইরে মন দিলাম। চওড়া রাস্তা। গাড়ি চলছে অনেক। ক্রমে আমরা পড়লাম একদম নদীর ধারের রাস্তায়। বেশ লাগছিল। গাড়িতে চলছে এফ এম। সেখানে কিছু চেনা সাম্প্রতিক ইন্টারন্যাশনাল হিটস বাজছে (শেপ অফ ইয়ু, ডেস্পাচিতো)। পাশ দিয়ে নদী। সাড়ে বারোটা নাগাদ পৌঁছলাম হার্ভার্ড স্কোয়ারে। দেবজ্যোতির দেখা নেই। ফোন করলে দেখি রিসিভ করছেনা। ওয়াটসঅ্যাপেও সারা নেই। এই রে। গেলো কোথায় ছেলেটা। ভাবতে ভাবতে দেখি সে হাজির। আমায় ক্যাবে আসলে নাকি ভুল জায়গায় নামিয়েছিল। বেশ।
কেমন আছ/আছিস এইসবের পালা মিটিয়ে শুরু হল আমাদের হার্ভার্ড ভ্রমণ।
অভিজ্ঞ ট্যুরিস্ট গাইডের মতো আমায় সমস্ত কিছু বোঝাল, দেখাল। গোটা কেম্ব্রিজ চত্বরের যে বেশিরভাগ বাড়িই হার্ভার্ড ইয়ুনিভারসিটির সেটা জানলাম। এবং সেই সমস বাড়িকে প্রায় চেনার একটা অব্যর্থ উপায় হল বাড়ির রঙ। একটা সিগনেচার লালচে দেওয়াল। পুরনো আর্কিটেকচার। মেন গেট দিয়ে ঢুকলাম হার্ভার্ডে। বিশাল সবুজ লন। আর আরেকটু এগোলেই ঐতিহাসিক হার্ভার্ডের স্ট্যাচ্যু। দেখলাম ট্যুরিস্টের ভিড় সেখানে। এই স্ট্যাচ্যুটা হার্ভার্ডে আসলে দেখেই দেখে লোকে। এটিকে বলা হয় স্ট্যাচ্যু অফ ঠরই লাইজ। অর্থাৎ, তিনটি মিথ্যের স্ট্যাচ্যু। প্রথমটি হল বলা হয় এটিই হার্ভার্ডের প্রতিষ্ঠাতা জন হার্ভার্ডের স্ট্যাচ্যু। আসলে কিন্তু আদপেই এটি জন হার্ভার্ডের মূর্তি না। দ্বিতীয়ত হার্ভার্ড মোটেই সেই অর্থে ইউনিভারসিটির প্রতিষ্ঠাতাও নন। উনি প্রথম অনুদান করেছিলেন ইউনিভারসিটির জন্য, তা ঠিক। তৃতীয়ত মূর্তিতে লেখা হার্ভার্ড প্রতিষ্ঠা হয় ১৬৩৮এ। আসলে তা না। হয় আরো দুই বছর আগে। বলা হয় এই মূর্তিতে মাথা ঘষে গেলে নাকি কপাল ফেরে। পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে তা করে যায় নিয়মিত। ট্যুরিস্টও তাই করে। আর তাই এই স্ট্যাচ্যুটি বেশ চকচকে। আমার অবশ্য মাথা ঠোকা বা পাশে পোজ দিয়ে ছবি তোলা কোনটাই হয়নি। অত ভিড় ঠিক ইচ্ছে হয়নি। দূর থেকেই ছবি তুলেছি।
এরপরে আমাদের গন্তব্য ছিল ওয়াইডনার লাইব্রেরি। এটি হার্ভার্ডের তথা পৃথিবীর সমস্ত ইউনিভারসিটির মধ্যে সবচেয়ে বড় লাইব্রেরি। যখন লাইব্রেরিটি বানানোর জন্য অনুদানা সে, তখন একটি শর্ত ছিল যে বাইরের ফ্যাসেডটি বদলানো যাবেনা। কিন্তু দিন যত এগিয়েছে, লাইব্রেরির কালেকশনে বই ততই বেড়েছে। কী উপায়? বুদ্ধি খাঁটিয়ে এবং স্থাপত্যবিদ্যার যথাযথ প্রয়োগ করে বর্তমানে বিল্ডিঙটির ছতলা ওপরে এবং মাটির নিচে আরো বারোতলা রয়েছে। একেই এতোগুলো তলা, তার ওপর এরিয়াও বিশাল। একেকটি ফ্লোর নর্থ ইস্ট ওয়েস্ট সাউথ উইঙে বিভক্ত। মোটামুটি সারা পৃথিবীতে যত ভাষায় যত বই প্রকাশ হয়, প্রত্যেকটার একেক কপি অন্তত এই লাইব্রেরিতে আছে। আমি দুটো ফ্লোর ঘুরেছিলাম। তাও সমস্ত উইং না। কিন্তু তাতেই ওই অত অত বই দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। হিউম্যানিটিজ থেকে সায়েন্স, টেকনোলজি থেকে ফিল্ম, যা চাই, সব আছে। আর অসামান্য ক্যাটালগিং সিস্টেম। দেবজ্যোতির কাছে শুনলাম যে এই লাইব্রেরি থেকে বিভূতিভূষণ তুলে পড়েছে যেমন, তেমনি প্রচুর ওল্ড ইংলিশ ক্লাসিক সিনেমাও দেখেছে। বিপুল সম্ভার। রিডিং রুমগুলোও অপূর্ব। সেই স্থাপত্য যে কোন মধ্যযুগীয় রাজপ্রাসাদকে হ্যাঁর মানাতে পারে কারুকার্যে। ও ওর প্রিয় স্পট দেখাল। জানলার ধারে সোফা আর টেবিল পাতা। বাইরে হার্ভার্ড লন দেখা যাচ্ছে। বেশ কফি কাপ হাতে আরামে পা ছড়িয়ে বসে সারা দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়, এমন সুন্দর।
এরপরের গন্তব্য মেমোরিয়াল হল। এই মেমোরিয়াল হলেই রয়েছে স্যান্ডারস থিয়েটার। সিনেমা স্ক্রিনিং হয়। অক্সফোর্ডের এক থিয়েটার হলের অনুকরণে তৈরি এই হলটি নাকি তার অ্যাকস্টিক ও ডিজাইনে রজনয় বিখ্যাত। ভিতরে ঢুকতে পারিনি। বাইরে থেকে দেখলাম।তার পাশেই রয়েছে অ্যানেনবারগ হল। এটি মূলত স্টুডেন্টদের ডাইনিং হল। এবং তারপরে রয়েছে মেমোরিয়াল ট্রান্সেপ্ট। যারা যারা হ্যারি পটারের সিনেমা দেখেছেন, হগওয়ারটসের প্রাসাদ যেমন রাজকীয় দেখিয়েছে, তার চেয়ে কোন অংশে কম না। রঙ্গিন কাঁচের জানলা, বিশাল উঁচু দেওয়াল। সেই দেওয়াল জুড়ে নাম লেখা সিভিল ওয়ারের সময় হার্ভার্ডের যে সমস্ত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিলেন ইউনিয়নের জন্য।
ইতিমধ্যে দুপুর দেড়টা বেজে গিয়েছে। খিদে খিদে পাচ্ছে। আমরা গেলাম লাঞ্চ সারতে। কেম্ব্রিজ কমন্স বলে একটি রেস্টুরেন্টে। টিপিকাল অ্যামেরিকান রেস্টুরেন্ট। ভিতরটা লাল (আর অল্প কালো) রং। সেদিন ফ্রান্স আর বেলজিয়াম (বোধহয়, খেয়াল নেই) ম্যাচ চলছিল। রেস্টুরেন্ট ভর্তি লোক। সবার হাতে বিয়ার, প্লেটে খাবার আর দুই চোখ টিভি স্ক্রিনে। আমরা গিয়ে বসলাম। ফিস ট্যাকো আর ব্রাউনি উইদ আইসক্রিম সহযোগে বেশ হেভি লাঞ্চ হল। পকেটেও হেভি (জনপ্রতি টিপস সহ ২৪ ডলার), পেটও ভালোই ভরেছিল। ওই দুপুরের চড়া রোদে ঘুরতে ঘুরতে বড্ড টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিলাম। গেলাম দেবজ্যোতির হোস্টেলে। আই আই টির হোস্টেলে সীমিত পরিকাঠামোয় অভ্যস্ত। হার্ভার্ডের হোস্টেল দেখে থ। হোটেলের ঘর বলা চলে প্রায়। সুন্দর এসি লাগানো ঘর, সাথে আবার অ্যান্টি রুম। আরামকেদারা। বেশ কোজি অ্যান্ড কমফোর্টেবল। গল্প করলাম খানিক। ও স্নান করতে গেল যখন, আমি মনের সুখে ওর বইয়ের তাক ঘাঁটলাম।
আমাদের ইচ্ছে ছিল কমন রুমে বসে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ দেখবো। কিন্তু বকবক করতে করতে আর তা হয়ে ওঠেনি। চারটের দিকে বেরোলাম আরো বাকি জায়গাগুলো ঘুরতে। পরপর বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের বিল্ডিং দেখলাম। নিজে বায়োলজির স্টুডেন্ট বলে বায়োসায়েন্সের বিল্ডিং দেখে বেশ একটা অন্যরকম অনুভূতি হল। ডি এন এ ডবল হেলিক্সের আবিষ্কারের যুগান্তকারী কাজ যেখানে বসে হয়েছে, সেটিও দেখলাম বটে। সমস্ত দিকপাল মানুষজনেরা যেই যেই ল্যাবে কাজ করেন, সেই ল্যাবগুলি চাক্ষুস দেখলাম। অমর্ত্য সেনের অফিস বিল্ডিঙটিও দেখলাম। কী অসম্ভব নিষ্ঠা ও মনোযোগ দিয়ে স্কলাররা কাজ করেন, তাঁদের ল্যাব, অফিস...সত্যি, পীঠস্থান বটে। মেকানিক্স বিল্ডিঙের চিলেকোঠায় বসে যে হার্ভার্ডের একটা দারুণ রূপ দেখা যায়, সেই অভিজ্ঞতাও হল। সাধারণ ট্যুরিস্টের চেয়ে ঢের বেশিই চিনলাম যেন হার্ভার্ডকে। ল স্কুলের সামনে সেই স্থাপত্য দেখে খানিক মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। তারপর চললাম নদীর ধার দিয়ে হাঁটতে। চার্লস ওয়াটারফ্রন্ট যার পোশাকি নাম। নদীর অপরদিকে অলস্টন আর বস্টন শহর। নদীতে কেউ কায়াকিং করছে, কেউ বা এমনিই ধারে বসে। কেউ রোয়িং করছে তো কেউ রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝেই সুন্দর বেঞ্চ পাতা। আমরা একবার বসে একটু জিরোলাম। পিঠে ব্যাগ। একদম কনফারেন্স থেকে চলে এসেছি, সাথে আবার ভারি ক্যামেরা। একটু টায়ার্ড লাগছিল। নদীর ধারে রাস্তা পার হলে সারি দিয়ে স্টুডেন্টদের থাকার জায়গা। স্টুডেন্ট হাউজিংগুলিও একেকটা দেখার মতো স্থাপত্য।
হাঁটতে হাঁটতে আমরা পৌঁছলাম ম্যাগাজিন বিচে। ছোট্ট একটু জায়গা। নদীর জলে পৌঁছনো যায়। দেবজ্যোতি জলে নামল। আমি আবার জুতো মোজা খোলার চক্করে যেতে হবে বলে নামলাম না। পটাপট কিছু ছবি তুললাম। ইতিমধ্যে সুজাতা জানালো ও রেডি। বেরিয়ে পড়ছে। আমি বেশ টায়ার্ড, তাই আরো হেঁটে এম আই টি অবধি গেলাম না। দেবজ্যোতি বলেছিল যে এম আই টিতা ঠিক সুন্দর না। মানে হ্যাঁ, সেন্টার ফর এক্সিলেন্স বটে, কিন্তু হার্ভার্ড যেমন সুন্দর, দেখে ভালো লায়ে, তেমন কিছুই না। আর তাই আফসোস না করেই লিফট ডেকে ফেললাম। যেখানে ক্যাবে উঠলাম, সেখানে দেখি একটা ওপেন এয়ার জিম। দিব্যি ইনোভেটিভ লাগল ব্যাপারটা। খোলা আকাশের নিচে শারীরিক কসরত, কিন্তু সমস্ত সফিস্টিকেটেড ইক্যুইপমেন্টস দিয়ে। ভারতবর্ষে এদিন আসতে কত দেরি কে জানে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment