কখনও অনেকদিন পর ট্রেনে চেপে বাড়ি ফিরেছেন? বা প্লেনে? মনে হয়না, কখন ট্রেনটা হাওড়ায় ঢুকবে। বা ওই তো, নীচে দমদম দেখা যাচ্ছে। সেই ব্রিজ, গাড়ি, বাস। কখন মাটি ছোঁবে প্লেনের চাকাগুলো? আমি যখনই ট্রেনে চেপে ম্যাড্রাস থেকে কলকাতা ফিরেছি, গোটা রাস্তা শুধুই হয় তামিল নয় তেলুগুতে বিজ্ঞাপন আর বিজ্ঞাপন দেখে দেখে চোখ পচিয়েছি। বিরক্ত লাগত। কিছুই পড়তে পারছিনা, তাও দেখছি। কেন জানেন? কারণ তারপর পরেরদিন সকাল নটার দিকে যেই ট্রেনটা খড়গপুরের দিকে আসবে, ব্যস, দেওয়াল জুড়ে শুধুই তখন বাংলা হরফ। সিমেন্ট থেকে শুরু করে কোচিং সেন্টার, শাড়ি থেকে শুরু করে টিউবওয়েল। তখন তার চেয়ে মনোরম দৃশ্য বুঝি আর কিছুই হয়না। আর তারপর যখন সিগনাল খেতে খেতে ট্রেনটা হাওড়ার প্ল্যাটফর্মে ঢোকে, ম্যাজিকের মতোই সব ক্লান্তি কথায় যেন ফুঁ দিয়ে উড়ে যায়। একেই বুঝি ঘরে ফেরা বলে, তাই না?
গানঃ Journey Song (Piku)
আসলে আমরা যেখানেই থাকিনা কেন, কর্মসূত্রে কি লেখাপড়ার জন্য, দিনের শেষে যেন মনের কোন এক কোণে সব সময় কলকাতা একটা আলাদা টান নিয়ে থাকে। মনে পড়ে,ম্যাড্রাস থেকে পুণে যাচ্ছিলাম, বম্বে দিয়ে ফ্লাইটে। আমায় এক সহযাত্রী জিজ্ঞেস করেন, "তুমি কোথায় থাকো?" একটুও না ভেবে উত্তর দিয়েছিলাম, "কলকাতা"। সাব কনশাসে রয়ে আছে যে। কী করি? পাঁচ বছর হল শহরটা ছেড়েছি। জানিনা ফিরব কি না আর। কিন্তু সত্যি কি ছাড়তে পেরেছি? পারা কি যায়? এই শহরের আকাশে বাতাসে যে এত টুকরো টুকরো স্মৃতি ছড়িয়ে রয়েছে, সেইগুলি কি প্যাকারস অ্যান্ড মুভারসরা আমার সাথে পাঠাতে পেরেছে? এখনও কেন উত্তরের কোন গলি দিয়ে গেলে শিহরিত হই? দক্ষিণের জাঁকজমকে নতুন করে প্রাণশক্তি পাই?
গানঃ এই কলকাতা ১৬ আমার
কলকাতা তো নিছকই একটা শহর না। বরং কলকাতা আসলে একটা ইমোশন। এ শহরের পথে ঘাটে যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে আবেগ, রয়েছে ভালোবাসা। দু পা অন্তর আছে নিখাদ বন্ধুত্ব। পথের ক্লান্তি দূর করতে রয়েছে হঠাৎ পাওয়া বন্ধু। বিপদে আপদে পাশে থাকার জন্য আছে বিরাট পরিবার। হয়তো ভবানীপুর শোভাবাজারের রোয়াক বা গলি তস্য গলির চায়ের দোকানের আড্ডা রিপ্লেসড হয়েছে বাইপাসের ধারের হাইরাইজে আর মোড়ে মোড়ে সিসিডি আর বারিস্তায়, তবুও কোন এক আশ্বিনের শারদপ্রাতে কিন্তু গোটা শহরটাই একসাথে সেজে ওঠে এক বিরাট মিলনোৎসবে।
গানঃ কলকাতা সং (প্রাক্তন)
No comments:
Post a Comment