Thursday, August 2, 2018

মজার চিঠি

প্রিয় অগ্নি

তোমার লেখা যাদবপুরের মেয়ে সিরিজটা পড়ছি। মন্দ লিখছ না। কিন্তু বাবা, বলি হচ্ছেটা কী? যবে থেকে তুমি সিরিজটি লেখা শুরু করেছ, জীবন যে আমার বড্ড বেশি হ্যাপেনিং হয়ে গিয়েছে। উঠতে বসতে বন্ধুদের থেকে প্যাঁক খাচ্ছি। ভাইরাল ভিডিওর চেয়েও বেশি মুখরোচক হয়ে গিয়েছে সিরিজটি। সেদিন তো আবার একজন আমায় ট্যাগ করে পড়ালও। বোঝো কাণ্ড। মায়ের কাছে মাসির গল্প! এ তো গেল ইউনিভারসিটির কথা। হোমফ্রন্টে অবস্থা শোচনীয়।

আমার মা আবার তোমাদের স্টেশনের বিশাল ফ্যান। সারাদিন বাড়িতে রেডিও চলছে। বাবা তো মাঝে মাঝে মন্তব্য করে, "বাড়িটাকে কি পান বিড়ির দোকান বানিয়ে ফেললে নাকি? সর্বক্ষণ বকবক আর ভুলভাল যত মাইন্ডলেস মিনিংলেস গান।" অবশ্য তাতে আমি বা মা কেউই পাত্তা দিইনা। সে যাই হোক, আত্মীয়স্বজনদের তো মা বড় মুখ করে বলেছিল যে "এই আজ না আমার মেয়েকে রেডিওতে শুনিয়েছে", এবার সেই মামা কাকা পিসির ছেলেমেয়েগুলো যারা কিনা তোমার একনিষ্ঠ ভক্ত, তোমার কোন আপডেট মিস করেনা, এখন সব তোমার লেখা পড়ে দুমদাম আমায় ফোন করছে, ওয়াটসঅ্যাপে মেসেজের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। আওয়াজের পর আওয়াজ খাচ্ছি। আমার জেঠুমণি আবার একটু গোঁড়া গোছের মানুষ। প্রথম থেকেই চাননি আমি যাদবপুরে পড়ি। "যতসব উচ্ছৃঙ্খল বাচ্চাকাচ্চার দল", এই তাঁর ধারণা। আমায় তো প্রায় উঠে পড়ে ব্রেবোরনে পাঠিয়েই দিচ্ছিলেন। নেহাত লাস্ট মোমেন্টে বাবা আমার সাইড নিলো। তা এ হেন জেঠুর কানে যদি এইসব যায় না, আমি শিয়োর, তোমার নামে নির্ঘাত কেস ঠুকে দেবে। এককালের দুঁদে উকিল কিন্তু জেঠুমণি। (সে তোমার নামে কেস ঠুকুক, তাতে আমার কিছু না। সোমক নিশ্চয়ই অন্য ছেলে অ্যাডপ্ট করে নেবে। ও মা গো না চললে হয় নাকি? চুপিচুপি বলে রাখি, আমি কিন্তু সোমকের বিশা...আল ভক্ত। আর একটা হাল্কা, উহু ভালো মতই ক্রাশও আছে। ও মা গো দেখি মূলত ওকে দেখব বলেই।) কিন্তু জেঠুমণি যদি এইসব শুনে আমায় কলেজ ছাড়িয়ে গৃহবন্দী করে দেয় না, ভালো হবে না বলে দিলাম। আর আমার কাজিনগুলোও হয়েছে একেকটা বাঁদর। সমানে আমায় ব্ল্যাকমেল করে যাচ্ছে। আচ্ছা মুস্কিলে ফেললে তো আমায়? নেহাত আমার বেস্ট ফ্রেন্ডটি বিন্দাস। এখনো অবধি রিঅ্যাকট করেনি এইসবে।

ফেসবুকের অবস্থাও ওদিকে নাজেহাল। এত্ত ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট। আদার ফোল্ডারে তো আবার গুচ্ছের মেসেজ আসতে শুরু করে দিয়েছে। তোমার ফ্যানেরা যে সব একেকটি সিবিআই এফবিআই এজেন্ট, জানতাম না। ঠিক আমাকে খুঁজে বের করেছে। আর সমানে মেসেজ। সেই মেসেজের আবার কত ক্যাটেগরি। "দিদিভাই, অগ্নিদার সিঙ্গলত্ব ঘুচিয়ে দাও" থেকে শুরু করে "শোনো, ঝুলিয়ে রেখোনা বেচারাকে। তেমন হলে আমরা তো আছি। সামলে নেব।" বাবা রে!

তাই বলি কি, কিছুই তো হওয়ার নেই এই ফ্রন্টে। তুমি বরং অন্য রাস্তা দেখো। বুঝলে? আর হ্যাঁ, চাইলে অ্যাপ্লিকেশন জমা রাখতে পারো। সিট খালি হলে কনসিডার করা যাবে না হয়।

(ঠিক যেরকম চাইছ সেরকম না) ভালোবাসা নিয়ো
(তোমার) যাদবপুরের মেয়ে

No comments:

Post a Comment