কলকাতায় সকাল ছটা মানেই চড়া রোদ। এখানে ভোর হয়ে যায় সেই ক-অ-খ-ন। যখন কালো রেডিওটাতে জগন্নাথ বসুর "কালি কথা" শুরু হয়। যখন জেঠু শীত গ্রীষ্ম বর্ষা নির্বিশেষে মোজা জুতো পরে সেন্ট্রাল পার্কে হাঁটতে বেরিয়ে যায়। মা ততক্ষণে বাসি বিছানা ছেড়ে ফ্রিজ থেকে ডাল তরকারি বের করে ফেলেছে। ঘুম ঘুম চোখে মায়ের চোখ রাঙানি অগ্রাহ্য করে তখন সারা রাত ধরে আসা প্রিয়জনগুলোর নোটিফিকেশন দেখতে দেখতে চলে একটু দিনযাপনের রসদ জোগাড়।
কষ্টে সৃষ্টে রাতের অপূর্ণ ঘুমকে সাময়িক টাটা বাইবাই করে বাবার সাথে বেরিয়ে পড়া "মর্নিং ওয়াকে"। দিনদিন সময় এগোচ্ছে। একটু গরম কম হবে, এই আশায়। কিন্তু, ঠান্ডা হাওয়া? কোথায় কে? শহর তখন ব্যস্ত রোজের কাজে। গলি গলি থেকে রিক্সায় ভ্যানে মায়ের হাত ধরে স্কুল যাচ্ছে সাদা লাল নীল চেক স্ট্রাইপ ইউনিফর্ম। সাইকেল চড়ে এক দল মুর্গি চলেছে ভবিতব্যের পানে। ল্যাম্প পোস্টের তারে দু পা অন্তর জোড়া শালিক। কৃষ্ণচূড়া গাছের ফাঁকে ফাঁকে বুলবুলি ফিঙের আরামকেদারা। ইয়া লম্বা ঝাঁটা দিয়ে চলছে ধুলো উড়িয়ে রাস্তা পরিষ্কার। ঠ্যালা গাড়িতে করে শহুরে বাবুদের জন্য আসছে "এক্কেরে ফিরেশ" সব্জি, ফল। মাঠে পার্কে কিছু হতাশ মানুষের জোর করে হা হা হাসি। পোশাকি নাম? লাফিং ক্লাব। ছেলেমেয়েদের ড্রিবলিং প্র্যাকটিস।
"সর্বশিক্ষা অভিযান" লেখা বিরাট স্কুল বাড়িটা কেবল শান্ত। চুপচাপ দাঁড়িয়ে। গরমের ছুটিতে এখন একটু জিরিয়ে নেওয়া। রবিবার আসতে এখনও ঢের বাকি। ঘুঙুরের শব্দে আর কত্থকের বোলে মুখরিত ছোটবেলাটা যে এখনও "লোডিং"।
No comments:
Post a Comment