একটা সময়, মানে যখন এই টি টুয়েন্টির দৌরাত্ম্য শুরু হয়নি, আই পি এল এসে সব লন্ডভন্ড করে দেয়নি, যখন ক্রিকেটে ঝড় বলতে শারজার মাঠে শেন ওয়ারনের বলে শচীনের তুলে তুলে ছয় আর সৌরভ গাঙ্গুলির বাপি বাড়ি যা বুঝতাম, তখন ক্রিকেট খেলাটাকে মন প্রাণ দিয়ে ফলো করতাম। সে টেস্ট হোক কি ওয়ান ডে। তখন বেশিরভাগ সময়ই অস্ট্রেলিয়ার সাপোরটার ছিলাম। সৌজন্যে স্টিভ ওয়া আর অ্যাডাম গিল্ক্রিস্ট। তবে নন অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে অবশ্যই ইন্ডিয়া। অজয় জাদেজা, রাহুল দ্রাবিড় এঁরা তখন আমার হিরো। বলতে লজ্জা নেই, সৌরভ গাঙ্গুলিকে তখন কিছুটা হলেও অপছন্দই করতাম, রাহুল দ্রাবিড়ের কম্পিটিটর ভেবে। শচীন শচীন করে সারা দেশ পাগল হলেও আমার পছন্দ বরাবরই হাটকে। তাই রাহুল দ্রাবিড় আর জাদেজা। তখন খবরের কাগজে এই ক্রিকেটারদের প্রচুর ছবি বেরতো। বিজ্ঞাপনে। সব কেটে কেটে রাখতাম। আমার পড়ার বইয়ের তাকের দরজার ভিতরের পাল্লায় বেয়ার জিন্সের বিজ্ঞাপনের অজয় জাদেজা শুয়ে থাকতো কেত মেরে, পেপসির বোতল হাতে থাকতো দ্রাবিড়। এম আর এফের টায়ারের সামনে দাঁড়িয়ে শচীন। মনে আছে, একটা খয়েরি রঙের ডায়েরি ছিল আমার। সেখানে খেলায় অস্ট্রেলিয়া (বেশি করে) আর ইন্ডিয়া (শুধু যদি দ্রাবিড় বা জাদেজা হিরো হয়) জিতলে সেইসব নিউজপেপার কাটিং জমিয়ে রাখতাম। বেড়াতে গেলেও হোটেলের ঘরে টিভি থাক্তেই হবে। ম্যাচ মিস করলে চলবে না। বাড়িতে ফোন করে বলে রাখতাম, খবরের কাগজ যেন তুলে রাখা হয়। সেই ডায়েরিটাও দিনদিন মোটা হতে লাগলো। স্মৃতিতে ঠাসা। হ্যাপি মেমোরিজে ভরপুর।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট সেই আমলে ছিল একটা বিরাট যজ্ঞ। একটা গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন। হইহই করে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই শিডিউল কেটে রাখা খবরের কাগজ থেকে। কে কাকে সাপোর্ট করবে, সেই নিয়ে কত জল্পনা কল্পনা। বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিনলে কত ওয়ার্ল্ড কাপ দেখতে যাওয়ার সুযোগ, এই ফাঁদে পা দিয়ে একটার পর একটা অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাবাকে দিয়ে কেনানো, এবং প্রতিবার ওই "বেটার লাক নেক্সট টাইম" পেয়ে সাময়িক হতাশ হওয়া। বিশ্বকাপের স্মৃতি বলতে হঠাৎ মনে পড়ে যায়, কোন একবার,কোয়ার্টার ফাইনালে ইন্ডিয়া পাকিস্তান খেলা চলছে। এদিকে আমি দাঁতের ডাক্টারের চেম্বারে, ই ই ডি এফে। দাঁত তোলার যন্ত্রণা উপেক্ষা করে বাড়ি ফিরেই টিভির সামনে।
সেইসব দিন গেছে। বারাবারি রকমের ক্রিকেট শুরু হওায় প্রথম প্রথম চেষ্টা করলেও এখন আর তেমনভাবে ফলো করতে পারি না। তবুও ভেবেছি, এই বছর বিশ্বকাপ দেখবো। হয়তো প্রতিটা ম্যাচ, প্রতিটা বল ফলো করা যাবে না, তাও, যতদূর সম্ভব। দেখবোই। এবং সেই আগের মত নিয়ম করে স্পোর্টসের পাতা পড়বোই। আফটার অল, ক্রিকেট বিশ্বকাপ মানেই যেন সেই ফেলা আসা শৈশব, কৈশোর।
আজ থেকে শুরু হচ্ছে আবারও। সেই মহারণ।
No comments:
Post a Comment