সারা বছর দাঁতে দাঁত চিপে রেখে কাজ করে যায় চিত্রাংশী। ভীষণ হোমসিক লাগে মাঝেমধ্যেই, তবুও, ছুটি ও নেয়না। সমস্ত ছুটি জমিয়ে রাখে এই আশ্বিনের শারদ প্রাতের ক'টা দিনের জন্য। সারা বছর বসের চোখ রাঙানি, সহকর্মীদের সাথে বাদানুবাদ, সব মাথা পেতে নেয়, মুখ বুজে সহ্য করে নেয়।
আরে বাবা, পুজোর এই কয়েকটা দিন যদি আপনজনেদের সাথে নাই থাকা হলো, তো কী লাভ? সক্কাল হতে না হতেই স্নান সেরে নতুন জামা পরে দিদিমণির হাত ধরে প্যান্ডেলে যাওয়া, তারপর কোনমতে অঞ্জলি দিয়ে প্রসাদ খেয়েই বন্ধুদের দলে ভিড়ে যাওয়া। সারাদিন এ প্যান্ডেল ও প্যান্ডেল ঘুরে খেয়ে দেয়ে ঘেমে নেয়ে বিধ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফেরা। তবে সেও বেশিক্ষণের জন্য না। আবার তড়িঘড়ি তৈরি হয়ে নেওয়া। সন্ধ্যের স্পেশাল সাজ। সবচেয়ে দামী আর ঝলমলে পোশাক এই রাতের জন্যই। তারপর হুড়মুড় করে এসে পৌঁছনো প্যান্ডেলে। ইতিমধ্যেই বন্ধুরা সব হাজির। পাড়ার মন্ডপের জলসা শুরু হবে যে। চলবে এন্তার ফুচকা, এগ রোল, বুড়ির মাথার পাকা চুল, কোল্ড ড্রিঙ্ক। এ কদিন সমস্ত ডায়েট যাবে শিকেয়, গুরুজনদের শাসন কাজ করবে না। অনেক রাত অবধি চলবে আড্ডা, ঝারি মারা। ব্যাকগ্রাউন্ডে কচিকাচাদের নাচ, গান। বড়দের নাটক। তারপর অনেক রাত অবধি বাংলা ব্যান্ডের গান। চন্দ্রবিন্দু, অভিলাষা... পরেরদিন অষ্টমী হলে আবার আরেক প্রস্থ মিটিং। কাকিমাদের সাথে। কে কোন দায়িত্বে থাকবে। চিত্রার খুব ভালো লাগে সন্ধিপুজোর কাজ করতে। একটা অদ্ভুত রকমের সৌন্দর্য যেন মায়ের মূর্তিতে দেখতে পায় ও। চিত্রা ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছে। জগতজননীর মধ্যেই খুঁজে পেতে চায় বারবার তাই নিজের মাকে।
No comments:
Post a Comment