Saturday, May 25, 2019

শহরের পাঁচালি ৩

টং টং করতে করতে শহরের ঘুম ভাঙ্গিয়ে ট্রামটা বেরলো ডিপো থেকে। রাস্তাঘাট শুনশান। রাতের শাটার এখনও নামানো। শেষ রাতের অল্প বৃষ্টির নরম প্রলেপ এখনও শহরের ক্ষতস্থানে প্রলেপ বোলাচ্ছে।
তবুও তারই মধ্যে দেখা যায় ব্যস্ত ত্রস্ত মায়ের হাত ধরে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা বেড়া বেনী, সাদা ফ্রক, পিঠে আলজেব্রা-টরিসেলি-সালোকসংশ্লেষ-এল নিনোর ভার বয়ে হাঁটছে মুনিয়া। ওর ভার যে লাঘব করতে হবে, ক্ষণিকের জন্য হলেও।
আবার ওই যে, পদ্মপিসি চলেছে। হাতে ঘটি। প্রতিদিন সকালের মত আজও যে গঙ্গা মায়ের সাথে সাক্ষাৎটা বাকি।  পান চিবুতে চিবুতে একটু সিরিয়াল-হেঁশেলের গল্প বাকি।
দীর্ঘ রোগে ভুগে জীর্ণ চক্কোত্তি খুড়ো হাতে বাজারের থলি নিয়ে বের হয়েছেন একটু টাটকা আনাজের সন্ধানে। অনেকদিন পর নাতিবাবুকে নিয়ে কন্যার বাপের বাড়ি আগমন আজ। চাঙ্গা করতেই হবে ওঁকে।
মুকুন্দ চলেছে চালপট্টির দিকে। আজকে কাজ না পেলে যে সন্ধ্যেয় হাড়ি চড়বে না। সাহস চাই, চাই ভরসা।
কাজল কালো উদাসীন এক জোড়া চোখ তাকিয়ে রয়েছে জানলার বাইরে। মন ভালো নেই ঊর্মির। মর্নিং কলেজের নিয়ম যদি ভুলিয়ে রাখতে পারতো মুহূর্তগুলিকে।

কাঠের সিট। লোহার শিকের বেয়াব্রু। লজ্ঝরে ট্রাম। আজ শেষবারের মতো বেরলো ডিপো থেকে।
কাল থেকে ওর ছুটি। অনন্ত অবকাশ। আসবে আধুনিকা। সে এক অন্য গল্প। মানুষগুলো সব এক থাকবে। হয়তো। হয়তো না। ভাগ্য কারুর ফিরবে। হয়তো। হয়তো না।
শুধু গুটিকয়েক পড়ে থাকবে স্ক্র্যাপের অপেক্ষায়...

 

No comments:

Post a Comment