আজ তুয়ার অফিস ঢুকতে একটু দেরিই হয়েছে রোজের তুলনায়। সোমবারের সকাল তো, রাস্তাঘাটে বাড়তি যানজট ছিল। অন্যান্য দিন সোয়া নটার মধ্যে ঢুকে গেলেও আজ পৌনে দশটা বেজেছে। এবং কপাল খারাপ হলে যা হয়, পড়বি তো পড়, লিফ্টে মুখোমুখি শ্রীময়ী ম্যামের। ম্যাম আজকে অন্যান্যদিনের তুলনায় আগেই এসেছেন। তুয়াকে দেখে এক রাশ বিরোক্তিসহ বললেন, "এত লেট?" তুয়া কিছু বলতে যাচ্ছিল, উনি হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে বললেন, "মিট মি ইন মাই অফিস ইন টেন মিনিটস।" আর ঠিক তখনই লিফ্ট ওদের বারোতলায় এসে থামল। তুয়ার হ্যাঁ না শোনার আগেই শ্রীময়ী গটগট করে বেরিয়ে গেলেন। তুয়া দু সেকেন্ড দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর ফোনটা ব্যাগ থেকে বের করে মাকে পৌঁছ সংবাদ জানিয়ে অফিসে ঢুকলো। তুয়া সহ অন্যান্য ইন্টার্নদের কোনো নির্দিষ্ট বসার জায়গা নেই। ওয়ার্কিং ডেস্ক নেই। ও আর দীপান্বিতা নামের আরেকটি ইন্টার্ন, সিঁড়ির নীচে একটা ছোট্ট কর্নারে প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল জোগাড় করে ওখানেই বসে। প্যান্টরির মনিরুলদাই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তুয়া দেখলো, দীপান্বিতা এখনো এসে পৌঁছয়নি। অবশ্য ওর বস, শোভন স্যার নিজেই আসেন লাঞ্চের পরে। আর এমনিতে বেশ হাসিখুশি দিলদরিয়া মানুষ। বকাঝকা করেন না। কাজ দিয়ে ডেডলাইন দেন। তার মধ্যে করে ফেললেই হলো। মাঝে মধ্যে চোদ্দবার এসে প্রোগ্রেস জানতে চান না। দীপান্বিতা অনেক স্বস্তিতে কাজ করতে পারে তাই। তুয়ার এই সুবিধে নেই। শ্রীময়ী ম্যাম ডেডলাইনগুলো দেন খুবই কম সময়ের। প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার জোগাড়। তারই মধ্যে প্রায় ঘন্টায় ঘন্টায় প্রোগ্রেস দেখাতে হয়। বিরক্ত লাগে। তবে কাজের দিক থেকে ওর নিজের এসাইনমেন্টগুলো দীপান্বিতার চেয়ে ঢের বেশি ইন্টারেস্টিং লাগে। এই যেমন গত সপ্তাহে ওকে বাংলার হারিয়ে যাওয়া কিছু লোকসংস্কৃতির ওপর রিসার্চ করতে হয়েছিল। বেশ ভালো লেগেছিল তুয়ার। অনেক অনেক অজানা তথ্য জেনেছিল। ম্যাম ওকে সঙ্গে নিয়ে ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে বসে সাহায্য করেছেন। ম্যাগাজিনের কোনো এক সংখ্যায় এই বিষয়ে আর্টিকল লেখা হবে। ৫০০০ শব্দের লেখার জন্য দুজনের এক সপ্তাহব্যাপী রিসার্চ। সত্যিই, কতটা এফর্ট যায় একটা লেখার পিছনে, ভাবতেও অবাক লাগে। অথচ তুয়া যখন এইসব ম্যাগাজিন নিজে পড়তো, কখনো এত তলিয়ে ভাবেনি। সব সময় মনে হতো, এ বুঝি লেখক বা লেখিকার সহজাত জ্ঞান। এই ম্যাগাজিন হাউজে কাজ করতে এসে তুয়া অনেক কিছু শিখছে। জানছে। শ্রীময়ী ম্যাম কড়া ধাঁচের হলেও, ওঁর কাছে কাজ করলে অনেক জানা যায়, শেখা যায়। তুয়া জানে, এতে আখেরে ওরই কেরিয়ারে উন্নতিতে কাজে লাগবে। তাই মুখ বুজে বকুনি হজম করে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তুয়া দেখলো, আট মিনিট হয়েছে। তাড়াতাড়ি এক ঢোক জল খেয়ে হাতে রাইটিং প্যাড আর কলম নিয়ে ছুটলো ও শ্রীময়ীর কেবিনের দিকে। ম্যাম খুব সময়ের ব্যাপারে কড়া। একটু দুরুদুরু বুকে তুয়া নক করলো দরজায়। কে জানে, কী নতুন কাজ আসে। এ সপ্তাহটা কেমন যায়, দেখাই যাক।
নতুন সপ্তাহ। নতুন কাজ। নতুন করে জীবনযুদ্ধ।
No comments:
Post a Comment