বারান্দার এই দোলনাটাতে বসে থাকতে থাকতে বেশ অনেকটা সময় কেটে যায় জাহ্নবীর। মধ্য বয়স। ছেলে মেয়েরা যখন যে যার মতো কেরিয়ার গড়তে সব্বাই দেশে বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এখন অখন্ড অবসর ওর। রায় বাহাদুর পরিবারের পুত্রবধূ, টাকার কোন অভাব নেই। আর তাই অভাব নেই কাজের লোকের, সেবা করার লোকের। তবে এমন পরিবারের সাথে মানানসই দাপট কোনদিনও ছিল না জাহ্নবীর। এই বয়সে এসে তো আরোই কথা ওঠে না। সারাদিন নিজের মতো করে সময় কাটে। গাছের খুব শখ জাহ্নবীর, বরাবর। নিজে হাতে বারান্দা আর ছাদে মরসুমি ফুলের বাগান করেছে। তাদের যত্নআত্তি করতে করতে আর তারপর ঠাকুরঘরে খানিকটা সময় গোপালের সেবা করতে করতে সারা সকাল চলে যায়। সব সময়ের কাজের লোক পলাশী হাতে হাতে সাহায্য করে দেয়। তারপর দুপুর থেকে এই বারান্দায়, গাছের মাঝে, ছোট্ট দোলনায়। কফি টেবিলে পাশে রাখা থাকে নানান ম্যাগাজিন, বই। যখন যেটা ইচ্ছে। আর থাকে পানের ডিবে।
আকাশ দেখতে খুউব ভালোবাসে জাহ্নবী। একেক মরসুমে, দিনের একেক সময়ে, আকাশের রঙের যে এই পরিবর্তন... মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখে ও। যেমন এই আজকের আকাশ। বিকেল আর কটা হবে... ওই চারটে? কী মায়াবী হলুদ আলো। এমন সোনালী আকাশ সচারচর চোখে পড়ে না। মেঘ করে আছে বটে, তবুও এই যে অদ্ভুত সুন্দর রঙ। একেই বুঝি বলে কনে দেখা আলো?
জাহ্নবীর মনে পড়ে যায়। প্রায় বছর পঁচিশ আগের কথা। এমনই এক মায়াবী বিকেলে এক জোড়া মুগ্ধ চোখ অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল ওর দিকে। অনেক্ষণ। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল একটা মধুর অনন্তের। আর সদ্য স্কুল পেরনো সেই রাই কিশোরী জাহ্নবীর সলজ্জ আরক্ত দুই গালের সাথে তাল মিলিয়ে পশ্চিমের আকাশে ঢলে পড়ছিল দীপ্যমান সূর্য।
No comments:
Post a Comment