Sunday, June 23, 2019



সফরনামা



১।

প্রতিদিনের মতই আজও অগ্নি শেয়ার ক্যাব বুক করলো অফিস যাবে বলে। তিরুভন্ম্যুর থেকে পেরুঙ্গুডি ওর অফিস মোটামুটি উড়ি পঁচিশ মিনিটের রাস্তা। ওই পাড়াটা অফিস পাড়া হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই শেয়ার ক্যাবের বাকি সহযাত্রীরাও ওই একই অঞ্চলেই নামেন। অগ্নি রোজ অ্যাপে দেখে নেয়। কাদের সাথে ওকে ক্যাব শেয়ার করতে হবে। কোনদিন হয় কন্নন, কোনদিন বালা, আবার কোনদিন রাজলক্ষ্মী বা মাধবন। ছাব্বিশ বছরের অগ্নির জীবনে সেই বিশেষ মানুষটির এখনও আগমন হয়নি। টিভিতে শেয়ার ক্যাবের বিজ্ঞাপনে সহযাত্রীর সাথে প্রেমের গল্প তাই এখনও ওকে ভরসা জোগায়। আর সেই জন্যই অধীর আগ্রহে ও প্রতিদিন অফিস জাতায়াতের সময়ে চাতক পাখীর মতো অপেক্ষা করে থাকে। সহযাত্রীটি যদি ভুল করেও সুরঙ্গমা বা সুনন্দা বা মাধবীলতা হয়।

বছরখানেকের ওপর হয়ে গেলো অগ্নি কলকাতা থেকে বদলি হয়ে চেন্নাই এসে পৌঁছেছে। আর পাঁচটা আই টি কোম্পানির চাকুরেদের মতোই দশটা-সাতটার জীবন। সারাদিন কীবোর্ডে খটাখট খটাখটের পর সন্ধ্যে হলে একলা ফ্ল্যাটে বই হাতে শুয়ে শুয়ে পড়া – উড়িয়া রান্নার ছেলেটি এলে ভালো, একটু ডাল-ভাত-মাছ জুটে যায়। নইলে আবার অ্যাপই ভরসা। এই থোড় বড়ি খাড়া জীবনে যে এবার একটু বৈচিত্র্য আসতে চলেছে, তা অগ্নি কিঞ্চিৎ টের পেলো যখন আজ দেখলো ক্যাবে ওর সহযাত্রীর নামটা। রুমুন দাশগুপ্ত। এবং পিক-আপ লোকেশন ঠিক ওর থেকে দুটো গলি আগে।

২।

ভাগ্যিস ওদের অফিসে এখনও প্রতিদিন ফর্মাল পোশাকে আসতে হয়। ভাগ্যিস। আরো একবার নিজের পরনের নীল স্ট্রাইপ শার্ট আর গ্রে ট্রাউজারসের দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে ভাবল অগ্নি। সেই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় ক্লাসে সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটি একদিন কথায় কথায় বলেছিল, “জানিস তো, তোরা ছেলেরা এই যে সারাক্ষণ এই টিশার্ট হাফপ্যান্ট পরে ঘুরিস, ভাবিস বিশাল কুল লাগছে, আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়। আমরা মেয়েরা পছন্দ করি বেশ একটা সুটেড-বুটেড লুক। আলাদা রকমের স্মার্টনেস আসে ওতে। কর্পোরেট লুক। দেখ, ক’মাস পর অফিস যাবি। তখন যদি পোশাক পরিবর্তন করে কোন হিল্লে হয়।“ চাকরিজীবনের দুই বছর কেটে গিয়েও করপোরেটের সুফল বলতে শুধুই মোটা মাইনে ছাড়া কিছুই পায়নি অগ্নি। আজ যদি বিড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে… এইসব ভাবতে ভাবতে অগ্নি অ্যাপে নজর দিলো। এই তো। রুমুন দাশগুপ্তকে ক্যাব পিক-আপ করেছে দেখাচ্ছে। আর এক মিনিট।। আলতো করে ডান হাত দিয়ে চুলটাকে একবার ঠিক করে নিলো অগ্নি। বুকের ভিতরটা দুরুদুরু করছে। এসপার কি ওসপার, মন বলছে আজ কিছু একটা হবেই হবে। ওই তো, ওই তো। গ্রে সুইফট ডিজায়ারতা আসছে ওর দিকে। মনের ভিতরের ডিজায়ারগুলো উড়ছে ডানা মেলে।

গাড়িটা এসে থামল ওর সামনে। দেখলো ভিতরে কেউ বসে আছে। নারীমূর্তি। মুখ ফেরানো জানালার দিকে। পরনে হলুদ কুর্তা। কানে ইয়ারফোন। হঠাৎই চোদ্দ বছর বয়েজ স্কুলে পড়া লাজুক সত্ত্বাটা পেয়ে বসলো বি-টেক এম বি এর ওপর। থতমত খেয়ে সামনের দরজাটা খুলে উঠে পড়লো ও। বাধ্য ছেলের মতো সীট বেল্ট বাঁধল, ওটিপি বলল। ক্যাব রওনা দিলো।

৩।

ও এম আরে পড়ার সময় প্রতিদিনই ক্যাবটা সিগ্নালে আটকায়। আজও তার কোন ব্যতিক্রম হল না। অগ্নি বসে আছে ড্রাইভারের পাশে। লুকিং গ্লাসের দিকে মাঝে মাঝেই চোখ চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই রুমুন দাশগুপ্তকে বেশ ভালোমতই দেখা হয়ে গেছে। একদম পিক্সি কাট চুল। এলোমেলো হয়ে আছে। ফর্সা, গোলগাল মুখ। চোখে হাল্কা কাজলের প্রলেপ। কানে এই এত বড় ঝুমকো, হলুদ রঙের। এই ব্যতীত চেহারায় আর কোন প্রসাধনের চিহ্ন নেই। ইয়ারফোন কানে সমানে কথা বলে যাচ্ছে ফোনে। অগ্নি এক তরফাই শুনতে পাচ্ছে কথা। খুব জোরে কথা হচ্ছে না, তাই পুরোটা আন্দাজও করতে পারছেনা। তবুও যেটুকু যা বুঝছে, মেয়েটির এই প্রথম বাড়ির বাইরে আসা। তাই বাড়ির লোকজন যারপরনাই চিন্তিত। মেয়েটির অবশ্য সেই নিয়ে কোন হেলদোল নেই। তার রুমমেট তামিলিয়ান হলেও উত্তর ভারতে থেকেছে ছোট থেকে। তাই সেই ওর হয়ে প্রয়োজনে দোভাষীর কাজ করে দিচ্ছে। মিস রুমুন দাশগুপ্ত, অগ্নি ধরেই নিলো ফর বেনিফিট অফ ডাউট, মিস দাশগুপ্তই হবেন উনি, শুধুমাত্র একজনের বিষয়েই প্রবলভাবে চিন্তিত শোনালো। গোটা কথোপকথনে বারবার বুজু কেমন আছে, বুজু কী খেলো, বুজুর ওষুধ আনা হয়েছে কি না, বুজু রাত্রে ঘুমিয়েছে কি না – এই কথাগুলিই বারবার ফিরে আসছিল। বোঝাই যাচ্ছে, এই বুজু নামক ব্যক্তিটিন্মিস দাশগুপ্তর প্রাণের ধন এবং বর্তমানে হয়তো কিঞ্চিৎ অসুস্থ। উনি আগামী দিনে প্রথম যেই ছুটি পাবেন, ছুট্টে গিয়ে বুজুকে দেখে আসবেন, এমনটাই ফোনে বললেন।

ক্যাব লোকেশনে এসে থামল। অগ্নি ড্রাইভারকে থ্যাঙ্ক ইউ বলে নেমে গেলো। এবং ব্যাপারটা কাকতালীয় নাকি ওপরওয়ালার কোন সূক্ষ্ম ইঙ্গিত, বুঝল না, মিস দাশগুপ্তও একই জায়গায় নামল। এবং সবচেয়ে বড় কথা, দুজনে দুজনের দিকে একবারও তাকালো না। অবশ্য অগ্নি আড়চোখে লক্ষ্য করলো, ওরা একই লিফটে উঠেছে। ও যাবে টেন্থ ফ্লোর। মিস দাশগুপ্ত অবশ্য আগেই সেভেন্থ ফ্লোরে নেমে গেলেন।

অফিসে নিজের ডেস্কে পৌঁছনোর অপেক্ষা। সিস্টেমে লগ-ইন করেই প্রথম চলে গেলো ফেসবুকে। সার্চ বারে টাইপ করলো রুমুন দাশগুপ্ত।

৪।

দুপুর দেড়টা নাগাদ অগ্নি ক্যাফেটেরিয়াতে এলো। এই ক্যাফেটা ওদেরই বিল্ডিংয়ের চারতলায়। সমস্ত অফিসের লোকজনেরই এখানে জাতায়াতের সুবিধে আছে। মোটামুটি ঠিকঠাক দামে চলে যাওয়ার মতো খাবার পাওয়া যায় বলে দুপুরের খাবারটা ও রোজ এখানেই সারে। আজ মিস দাশগুপ্তকে দেখার পর থেকেই মন বেশ ফুরফুরে, উড়ু-উড়ু। এমন দিনে তাই টেক অ্যাওয়ে কাউন্টার থেকে পছন্দসই মাটন বিরিয়ানি নিয়ে বসল জানলার ধারের টেবিলে। অন্যান্যদিন বিরিয়ানি পেলে আর অগ্নির অন্য কোন দিকে নজর থাকে না। হুঁশও না। তবে আজ ব্যাপারটা অন্যরকম। ইয়ারফোনে বাজছে লেটেস্ট পছন্দের “আপনা টাইম আয়েগা”। মনে আশা, সকালের ঘটনার পর থেকে যদি সত্যিই টাইম আসে।

কিন্তু হায় রে, এ তো জীবনের গল্প। সিনেমা না। আয়েস করে হাত মুখ ধুয়ে যেই বেরোচ্ছে ও ক্যাফেটেরিয়া থেকে, দরজার ওপারে চোখ চলে গেলো। এক ঝলক সূর্যরশ্মির মতো ঝলমলে হলুদ সকালের সেই মিস রুমুন দাশগুপ্ত। হ্যাঁ, সকাল সকাল ফেসবুক ঘেঁটে অগ্নি কনফার্ম করেই নিয়েছে, মিস দাশগুপ্ত “মিস”ই। এবং খুব ভুল না করলে, বর্তমানে সিঙ্গল। এবং রেডি টু মিঙ্গল। অগ্নি ভেবে পেলো না। পরিচিতিসূচক হাসবে? নাকি কথা বলবে? না কী করবে? যতক্ষণে ভেবেচিন্তে একটা অতি ক্যাব্লা হাসি হাসল, ততোক্ষণে মিস রুমুন দাশগুপ্ত ওকে পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছেন সোজা বিলিং কাউন্টারে। চিনেছেন, বা আদৌ লক্ষ্য করেছেন বলে তো মনেই হয় না। যাহ্‌। কপাল। পোড়া কপাল।

৫।

সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ অগ্নি কাজ গুছিয়ে ল্যাপটপটা ব্যাগে ভরে নীচে নামার জন্য বেরলো। সামান্য খিদে পাচ্ছে। সামনের দোকানটা থেকে চা-বিস্কিট খেয়ে তবে ক্যাব বুক করবে ঠিক করলো। চায়ের দোকানে তখন রাজ্যের ভিড়। পিলপিল করছে অফিস ফেরতা চাকুরেরা। চায়ের দাম মিটিয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছতে যাবে, চোখে এসে লাগল হলুদের দমকা হাওয়া। উফ। ঠিক যেন সিনেমা। এটা যদি বাস্তব না হয়ে যশরাজের সিনেমা হতো, তাহলে ঠিক এই মুহূর্তে হাওয়া দিত মৃদুমন্দ। বা হয়তো কালবৈশাখী ঝড় উঠতো। সাথে একটু আধটু ব্যালাড বাজত। তা তো হলোই না। বরং ঘামে প্যাচপ্যাচ করতে করতে চেন্নাইকে মনে মনে পঞ্চাশবার গালাগালি দিতে দিতে মিস দাশগুপ্তকে দেখা গেলো ফোন বের করে খুটখুট করতে।

সেই দেখে অগ্নির মনে পড়ে গেলো, আরে, ওকেও তো ক্যাব বুক করতে হবে। বাড়ি ফিরতে হবে। কপাল করে যদি আবারও দুজনের একই ক্যাব হয়, তা হলে এবার কথা বল্বেই। ঠিক করে রেখেছে। রুমুন দাশগুপ্ত ফসিলসের ফ্যান, ফেসবুক থেকে জানা গিয়েছে। রূপম ইসলাম যদি এবার ওদের মধ্যে সেতু হয়। জয় রক।

ওই যে বললাম, এটা তো সিনেমা নয়। বাস্তব জীবন। ঘোরতর কঠিন বাস্তব। ক্যাব বুক হলো। সহযাত্রী রামানুজন অ্যান্ড আদার এবং স্বামীনথন। জয় রকের পাথরের ভার পকেটে ভরে অগ্নি ফিরল নিজের ডেরায়। প্রতিদিনের মতোই। বৈচিত্র্যহীন জীবনে।

৬।

এরপর কেটেছে বেশ কিছুদিন। অগ্নির আর দেখা হয়নি রুমুনের সাথে। প্রতিদিন ক্যাব বুক করার সময়, ক্যাফেটেরিয়াতে জানলার ধারে প্রিয় টেবিলে বসে খেতে খেতে, হঠাৎ কোথাও এক ঝলক হলুদ দেখলেই অগ্নির মনে পড়ে যেত সেদিনের সেই সূর্যরশ্মিকে। প্রায় দিন দশেক পর, অফিস থেকে বেরিয়ে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে আছে আনমনে, ইয়ারফোনে অ্যাপে তখন রবীন্দ্রসঙ্গীত চ্যানেলে চলছে “তুমি হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে আসা ধন”, ক্যাব আসতে দশ মিনিট দেরি, মাথা তুলে এদিক ওদিক দেখছে, এমন সময় প্রায় পাশেই এসে দাঁড়ালো লাল ঢাকাই শাড়ি পরিহিত মিস রুমুন দাশগুপ্ত। গানের কথার সাথে মিলিয়েই অগ্নি যেন চমকে উঠল। ঠিক যেন বায়োস্কোপ। ও হাল্কা হাসি ছুঁড়ে দিলো রুমুনের দিকে। রুমুন কি চিনতে পারলো? ওর কাজলনয়না চোখদুটিতেও যেন ক্ষণিকের চমক খেলে গেলো। চওড়া এক গাল হাসি হেসে দিলো প্রত্যুত্তরে। তারপর কী যে হলো কে জানে? বসন্তের মৃদুমন্দ বাতাসটা ভারি অদ্ভুত। বেয়াড়া রকমের। ভালো ভালো লোকগুলোর মাথার পোকাগুলিকে নাড়িয়ে দিতে ওস্তাদ। ফস করে অগ্নি বলে ফেলল, “হাই, আমি অগ্নি। সেদিন শেয়ার ক্যাবে…”। “হ্যাঁ, মনে আছে। অবশ্য আপনার নাম লক্ষ্য করিনি অ্যাপে। আমি রুমুন।” বাহ, বেশ মিষ্টি কন্ঠস্বর তো, অগ্নি খেয়াল করে। আরো খেয়াল করলো, মাঝে মাঝেই মেয়েটির সরু আঙুলগুলো চলে যাচ্ছিল চুলে, উড়ে যাওয়া অবাধ্য চুলগুলিকে ঠিক রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টায়। “বুজু কেমন আছেন?” ও জিজ্ঞেস করে ফেলে। রুমুন মুহূর্তের জন্য অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “ভালো। ভালোই আছে। বুজু আমার পুশ্যির নাম। বিড়াল।”

“ও, আপনি বুঝি ক্যাট লাভার?” অগ্নি প্রশ্ন করে। মনে মনে ভাবল, বোঝা উচিত ছিল। ফেসবুকে কাভার পিকচারে একগাদা মিষ্টি বিড়ালছানা জ্বলজ্বল করছে।

“কুকুর-বিড়াল দুইই আমার পছন্দের। বাড়িতে যদিও এখন শুধুই বুজু আছে।” রুমুন বলে। “আপনি?”

“আমি ওই দূর থেকেই সব ভালো। আসলে ছোটবেলায় আঁচড় খেয়ে সাতটা ইঞ্জেকশন নেওয়ার পর একটু দূরে দূরেই থাকি ওদের থেকে। তবে “লিভ অ্যান্ড লেট লিভ” এই পলিসিতে ঘোরতর বিশ্বাসী।” অগ্নির কথা শেষ হতে না হতেই রুমুনের হাতের ফোনটা বেজে ওঠে। হারমোনিকায় “প্যার হুয়া চুপকে সে”। আহা, শ্রুতিমধুর বটে। ও ফোন তুলে কয়েকবার “ইয়েস আন্না, কাম টু লোকেশন”, “ইয়া, লোকেশন, লোকেশন”, “ড্রপ তিরুভন্ম্যুর” বলে ড্রাইভারের সাথে কথা চালালো। ফোন রেখে তারপর অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার ক্যাব আসছে। আপ্নিও কি আর এম জেডেই?” অগ্নি উত্তর দিলো, “হ্যাঁ। টেন্থ ফ্লোর। আপনি তো বোধহয় সেভেন্থ, না?” রুমুন এইবারে কট্মট করে চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে কপট রাগতস্বরে বলল, “আপনি শুধু ইভসড্রপই করেননি, আবার এরকম্ভাবে স্টকও করেছেন দেখছি। যাই হোক। ওই আমার ক্যাব এলো। আজ আসি?”

৭।

(ফাস্ট ফরওয়ার্ড। দু’সপ্তাহ। ইতিমধ্যে বার দশেক একসাথে দুজনের অফিস ক্যাফেটেরিয়াতে লাঞ্চ সারা হয়েছে। তার মধ্যে তিনবার সত্যিই কোইন্সিডেন্স। আর বাকিগুলো রীতিমতো প্রি-প্ল্যান্ড। ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিক্যুএস্ট পাঠানো ও তারপর বন্ধুত্ব গ্রহণ পর্বও মিটে গিয়েছে। ক্রমে ওয়াটসঅ্যাপের নম্বরও দেওয়া নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, সেই প্রথমদিনের পর থেকে আর ওদের কখনো একই শেয়ার ক্যাব মেলেনি।)

আজ চেন্নাইয়ের আকাশ মেঘলা। সারাদিনে কয়েক পশলা বৃষ্টিও হয়েছে। ঠাণ্ডা হাওয়া শনশন করে বইছে। অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে অগ্নি আর রুমুন। পাশাপাশি। অগ্নির পরনে নীল শার্ট, সাদা ট্রাউজার। রুমুন কমলা কুর্তি, গোলাপি লেগিংস। দুজনের হাতেই মোবাইল। শেয়ার ক্যাবের অ্যাপ খোলা। এমন সময় হঠাৎ বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি শুরু হলো। রুমুন ঝটপট পিঠের ব্যাগ থেকে ওর লাল ছাতাটা বের করলো। অগ্নির দিকে তাকিয়ে দেখলো, কোন হেলদোল নেই। বুঝলো ছাতা নেই সাথে। রুমুন আস্তে আস্তে ওর পাশে ঘেঁষে দাঁড়ালো। অগ্নি ওর থেকে অনেকটাই লম্বা। কষ্ট করে ছাতাটা উঁচু করে ধরলো যাতে দুজনেরই মাথা বাঁচে। তারপর ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “বাই কোইন্সিডেন্স তো সেদিএন্র পর থেকে আর আমরা একই শেয়ার ক্যাবে ম্যাচড হলাম না। আজ কি মামলা নিজদের হাতে নিয়ে একটা মাইক্রো বুক করা যায়? ড্রপ লোকেশন কী দেবো বলো।” মুচকি হেসে অগ্নি বলে, “খুব অসুবিধে না হলে বিচ দেবে? এমন সুন্দর ওয়েদারে একটু সমুদ্রের হাওয়া খাওয়া যায় তো? অবশ্যই তোমার আপত্তি না থাকলে।”

রুমুন খানিক ভেবে বলে, “না। আপত্তি নেই। কাল শনিবার। সকাল সকাল ওঠার তাড়াও নেই। বেশ। চলো তাহলে। তবে ডিনারটা কোথাও বাইরেই করব কিন্তু।”

“অ্যাজ ইউ উইশ।” অগ্নি উত্তর দেয়। ছাতাটাকে অগ্নির হাতে ধরিয়ে রুমুন বলে, “আচ্ছা মানুষ তুমি। দেখছ এই এত উঁচুতে ছাতাটা ধরতে আমার অসুবিধে হচ্ছে, কোন হেলদোল নেই। ধরো এটা। আমি ক্যাব বুক করি।”

ঠিক সেই মুহূর্তেই পাশের চায়ের দোকানের রেডিওতে ভেসে উঠলো বম্বে সিনেমার বিখ্যাত “তু হি রে” গানের তামিল ভারসান। আহা, কী সমাপতন। কে বলে জীবনটা সিনেমা না?

No comments:

Post a Comment