Saturday, June 8, 2019

তুয়ার হিজিবিজি ৪

ইন্টার্নশিপ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম একটা শনিবার তুয়ার ছুটি ছিলো। শ্রীময়ী ম্যাম সহ বাকি অনেকেই জামাইষষ্ঠীর ছুটি নিয়েছিল। তুয়া সারাদিন ওর এই এইটুকু ঘর, আলমারি এই সমস্ত গোছগাছ করলো। যদিও ঘর দোর পরিষ্কার করার জন্য জেঠিমাদের ঠিকে লোক মীনাদিকেই বলা আছে, তাও মাঝে মধ্যে একটু নিজের হাতে ঘর দোর না গোছালে তুয়ার চলে না। মোটে অষ্টাদশী হলে কী হবে? তুয়ার কিন্তু এই ইতিমধ্যেই বেশ একটা নিজের কাজ নিজে করা, স্বাধীনচেতা মনোভাব এসে গিয়েছে। আসানসোলের পাড়া পড়শিরা সেসব শুনে মাকে বলে, "বাহ বৌদি, মেয়ে যে ঘোরতর সংসারী হয়ে গেলো। বেশ ভালো। গ্র্যাজুএশনটা পাস করলেই বিয়ে দিয়ে দিতে পারবে, কোন চিন্তা নেই।" মা বা বাবা ভাগ্যিস এসবে তেমন মাথা ঘামায় না। ওদের ইচ্ছে, অবশ্যই তুয়ারও। মাস্টার্স পড়বে। তবে চাকরি। তারপর না হয় পরের কথা পরে ভাবা যাবে। তুয়া মাস কম্যুনিকেশন নিয়ে পড়ছে। ওর ইচ্ছে পরবর্তীকালে কোন মিডিয়া হাউজে যুক্ত হওয়ার, সাংবাদিক হিসেবে। আর সেই জন্যই এই সামারে ও বিখ্যাত এক বাংলা ম্যাগাজিনে ইন্টার্নশিপ করছে।
তুয়া যেই বাড়িটাতে থাকে, এর ঠিক সামনেই একটা বড় খেলার মাঠ। মাঠের চারিদিকে দোতলা বাড়ি। এখনও মাল্টি স্টোরিডের খপ্পরে পড়েনি এই পাড়াটা। বেশ একটা পাড়া-পাড়া ভাব এখনও আছে। তুয়ার খুব ভালো লাগে এই পরিবেশ। এক তলায় জেঠু জেঠিমা থাকেন। এই জেঠু জেঠিমা তুয়ার নিজের আত্মীয় না হলেও দূর সম্পর্কের পরিচিত। ওঁদের ছেলে ইংল্যান্ডে চাকরি করে। ওখানেই সেটল্ড। দোতলায় যে ঘরে তুয়া থাকে, তার পাশে দুটো ঘর সব সময় তালা দেওয়া থাকে, শুনেছে ওই দুটোই সেই ছেলের ঘর। মীনাদি সপ্তাহে দু তিনদিন তালা খুলে পরিষ্কার করে। জেঠু জেঠি দুজনেই বয়স্ক। একলা থাকবেন, এত বড় বাড়ি। তাই পেয়িং গেস্ট রেখেছেন। কাগজে কলমে তুয়ার লোকাল গার্জেন হলেও, সেরকমভাবে ওঁরা গার্জেনগিরি ফলাননা। মাঝে মধ্যে জেঠির হেঁশেলে ভালো মন্দ রান্না হলে ওপরে পৌঁছে যায়। এমনিতে তুয়া নিজের বাজার নিজেই করে। রান্নাটা করে দেয় লক্ষ্মী পিসি। তুয়া রোজ বেরনোর আগে একটা চিরকুটে লিখে দিয়ে যায় কী কী রান্না হবে। ওর ঘর লাগোয়া ছোট্ট কিচেনে। ফ্রিজে বাজারহাট থাকে। পিসি সারাদিনে যে কোন সময় হোক এসে রান্না করে রেখে যায়। এই ব্যবস্থা জেঠিমারই করা। তুয়াকে প্রথমেই বলেছিলেন, "শোনো, তোমাদের বয়সের খাওয়া দাওয়া রুচি সব আমাদের থেকে আলাদা। তাই ভালো হয়, নিজের খাওয়ার ব্যবস্থা আলাদা করেই করো। এই হলে সম্পর্ক খারাপ হবেনা। এমনিতেই ভাড়াটে বাড়িওয়ালার সম্পর্ক বিখ্যাত।"
এই সিস্টেমে তুয়ার দিব্যি চলে যাচ্ছে। এক বছর তো হয়ে গেলো। কেউ কারুর ব্যাপারে নাক গলায় না। বাড়ির কিছু সামান্য নিয়ম কানুন আছে। ওই যেমন, রাত দশটার মধ্যে ফেরা, বাইরে রাত কাটালে আগাম জানিয়ে রাখা। এইসব। কথাবার্তা খুব যে নিয়মিত হয়, তা না। মাঝে মধ্যে হাই হ্যালো। সৌজন্যমূলক হাসি বিনিময়। ব্যস। এই ভালো। বাসন একসাথে থাকলে ঠোকাঠুকির যে প্রবল সম্ভাবনা, ভাগ্যিস দুপক্ষই জানে। আর তাই, পাড়া প্রতিবেশীদের অবাক করে দিয়ে এক বছরের ওপর তুয়া টিকে আছে পেয়িং গেস্ট হিসেবে।

No comments:

Post a Comment