দিনটা মোটেই ভালো যাচ্ছেনা তুয়ার। অফিসে আসা ইস্তক ঝুট ঝামেলা। বম্বের কোন ক্লায়েন্ট অফিস থেকে বুঝি কেউ আসছেন মিটিংয়ে। তিনি বেশ হোমরা চোমরা কেউকেটা বোধহয়। ব্যস। সুকুমার স্যার সকাল থেকে হন্তদন্ত হয়ে এদিক সেদিক করে বেড়াচ্ছেন। এর ডেস্ক নোংরা, ওর ডেস্কে পাইল্ড আপ ওয়ার্ক, তমুকের ফাইল ক্যাবিনেট ধুলো এসব চলছিলোই। হাউজকিপিংকে ডেকে সমস্ত পরিষ্কার করানো হচ্ছে। সবের দায়িত্ব পড়েছে সৌরভদার ওপর। সৌরভদা আবার বিশ্ব কুঁড়ে। এবং বীভৎস রকমের শেয়ানা পাব্লিক। ঠিক নিজের কাজ এবং ভুল ত্রুটি অন্যের ঘাড়ে চাপাতে ওস্তাদ। কী কুক্ষণে যে তুয়া তখন ওখানে ছিল। অমনি নজরে পড়েছে সৌরভদার। আর কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। তিনি নিজে দিব্যি ক্যাফেটেরিয়ার কফির পর কফি শেষ করে যাচ্ছেন। আর এদিকে ওর আর দীপান্বিতার ওপর চলছে এই জুলুম। মাঝে মাঝে এসে আবার দেখে যাচ্ছে, ঠিকঠাক চলছে তো সব? সবে সবদিক সামলে ওরা একটু নিজেদের "সীটে" এসে বসেছে, অমনি পিওন লক্ষ্মণদা এসে বলে গেল, "দিদিমণিরা, শ্রীময়ী ম্যাডাম ডাকছেন তোমাদের। যাও দেখো আবার কী হলো। বেশ রেগে আছে কিন্তু। সাবধানে যেও। এই এতক্ষণ মনোজদা খুব বকা খাচ্ছিল।" তুয়া ভীতু বরাবরের। এইটুকু শুনেই নার্ভাস। দীপান্বিতা বরং অনেক মাথা ঠাণ্ডা। অ ওকে "কুল" থাকতে উপদেশ দিলো। দুজনে ছুটলো শ্রীময়ীর ঘরে।
ঢুকতেই বকার বন্যা শুরু। ব্যাপারটা কিছুই না। শ্রীময়ী ওদের দুজনকে সকাল এগারোটায় একটা কাজ দিয়ে মেইল করেছেন। সেটার ওইর প্রগ্রেস রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল একটায়। এখন একটা পনেরো। কেন ওরা কাজ সম্পর্কে জানায়নি। তুয়া একটু আমতা আমতা করে বলল সৌরভদার নির্দেশে ওরা কাজ করছিল। ব্যস। সঙ্গে সঙ্গে শ্রীময়ী ম্যাম রেগে লাল। সৌরভদাকে নিজের কেবিনে ডেকে এক প্রস্থ চিৎকার চেঁচামিচি। কেন শ্রীময়ী আর শোভনের ইন্টার্নদের দিয়ে কাজ করাবে। সৌরভদাও অনড়। ডিপার্টমেন্টের ইন্টার্ন। যে কেউ কাজ দিতে পারে। এই নিয়ে শেষ মেশ এমন ফাটাফাটি চিৎকার হচ্ছিল, শোভন স্যার এসে তখন মধ্যস্থতা না করলে যে কী হত, তুয়া ভাবতে পারেনা। ঘন্টাখানেকের এই ঝগড়াঝাঁটির পর যা ঠিক হল, যেহেতু তুয়া শ্রীময়ীর কাছে রিপোর্ট করে, সেহেতু ওকে দিয়ে কোন কাজ করাতে গেলে আগে শ্রীর অনুমতি নিতে হবে। শোভনের এমন কোন দাবী নেই। তাই দীপান্বিতাকে যে কেউ কাজ দিতে পারবে। দীপান্বিতা একটু কাঁচুমাচু মুখ করে এবড়োতে যাচ্ছিলো, শ্রী ওকেও তুয়ার সাথে থেকে যেতে বললেন। "শোনো, কাজটা যেটা দেওয়া আছে, সেটা করে আমায় সাড়ে তিনটের মধ্যে পাঠাও। অনেক টাইম ওয়েস্ট হয়েছে। আর পারা যাচ্ছে না। নাউ গো, গেট গোয়িং।" ঘড়ি দেখল তুয়া। সয়া দুটো বেজে গেছে। মানে আজও লাঞ্চ গেলো। শুকনো মুখে একবার শ্রীময়ীর দিকে তাকিয়ে বললও, "ঠিক আছে ম্যাম। ঝটপট লাঞ্চ করে আমরা করে দিচ্ছি কাজটা।" শ্রীময়ী একবার তাকালেন ওদের দিকে। তারপর ঠাণ্ডা গলায় বললেন, "এটা অফিস। এখানে ইন্টার্নশিপ করতে এসেছও। পিকনিক নয়। যে কাজটা দেওয়া রয়েছে, ফিনিশ ইট ফার্স্ট অ্যান্ড দেন ডু ওয়াটেভার ইয়ু ওয়ান্ট। বি প্রফেশনাল।"
তুয়া স্তম্ভিত। এই শ্রীময়ী ম্যামই দুদিন আগে ওকে ক্যাফেটেরিয়াতে নিয়ে গিয়ে ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স নিয়ে কত কথা বললেন। সময়মতো খাওয়াদাওয়া নিয়ে বললেন। আর আজই এই উল্টো বচন? মাথা নিচু করে বেরিয়ে এলো ও। পাশে দীপান্বিতা। ডেস্কে ফিরে দীপু ওকে বললও, "চল ক্যাফেটেরিয়া। খেয়ে আসি। তারপর কাজটা নিয়ে বসবো।" তুয়া অবাক হয়ে বলল," শুনলই না ম্যামের কথা? এরপর ক্যাফেটেরিয়াতে দেখলে সর্বনাশ।" দীপু অভয় দিয়ে বলল, "ল্যাপটপ আর রাইটিং প্যাড নিয়ে চল। স্যান্ডুইচ খেতে খেতে কাজ করব। ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স। বুঝলি? সব সময় অত লিটারালি সব কথা নিতে হয় না। আর হ্যাঁ, বসকে সব কথা বলবি না। বিশেষ করে উইকনেসগুলো নিজের। বস ইস ইয়োর বস, নট অ্যা ফ্রেন্ড। মাথায় রাখবি।
সত্যিই, এই কর্পোরেট জীবন যে কতই বিচিত্র, তুয়া অবাক হয়ে ভাবে। সব কথা ফেস ভ্যালুতে নেওয়াও মুশকিল।
No comments:
Post a Comment