ইন্টার্নশিপ শেষ করে তুয়া এক সপ্তাহ আসানসোলে নিজের বাড়ি থেকে ঘুরে এলো।
অনেকদিন পর আত্মীয়স্বজন, স্কুলের বন্ধুবান্ধব মিলে দেখা সাক্ষাৎ, গল্প,
আড্ডা, ঘুরে বেড়ানো, সিনেমা, থিয়েটার দেখা। সব মিলিয়ে বেশ জমজমাট ব্যাপার।
কিন্তু ওই যে, সব ভালোর মেয়াদ বড্ড সীমিত। দেখতে দেখতে ছুটি শেষ। এবার আবার
কলকাতা ফেরার পালা। কলেজ শুরু হয়ে যাবে। আবার রোজের একঘেয়েমি।
তবে এবারে একটা ভালো ব্যাপার আছে। মা আসছে ওর সাথে। দিন দশেক ওর কাছে থেকে যাবে। দশটা বাড়তি দিন মায়ের আদর যত্ন পাবে। এই
ভেবেই এবারে যেন কলকাতাগামী বাসে চাপতে একটুও মন খারাপ করেনি তুয়ার। তবে
হ্যাঁ, কলকাতা শহরের প্রতি আলাদা একটা ভালোবাসাও দিব্যি কাজ করে। এই শহরই
ওকে দিয়েছে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ। প্রথম উপার্জন। ও, ইন্টার্নশিপ করে
তুয়া খানিকটা টাকা রোজগার করেছে বটে। এবং সেই টাকা সোজা গিয়ে জমা হয়েছে ওর
অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ ফান্ডে। কলকাতায় পড়াশোনা আর থাকার খরচ বাবদ বাবার থেকে
মাস গেলে টাকা পায়। সেখান থেকে অল্প স্বল্প জমানোর চেষ্টা করলেও, খুব একটা
পরিমাণ হয়না। ভ্রমণ ফান্ড বাড়ানোর জন্য তাই ইন্টার্নশিপ, জন্মদিন পুজোর
টাকা, এগুলোই ভরসা।
কলেজের বন্ধুদের ওয়াটসআপ গ্রুপে চলছে জল্পনা
কল্পনা। নতুন সেশন। কেমন হবে কোর্স। জুনিয়ররা কেমন আসবে। হেঁহে, ভাবতেও
অবাক লাগে। এই তো সবে যেন এইচ এস পাস করে একদিন অনলাইনে ফর্ম ভরলো। তারপর
এক রোববার বাবার হাত ধরে কলকাতা এলো। এডমিশন টেস্ট দিলো। ভালোভাবে উৎরেও
গেল। তারপর ভর্তি। কলেজের হোস্টেল। সেখানে ব্যবস্থা অপছন্দ। তারপর এই জেঠু
জেঠিমার বাড়ি থাকা শুরু। তারপর ক্লাস, ইন্টার্নশিপ। দেখতে দেখতে কেমন দিন
কেটে যায়, না? একটা বছর ভালোমন্দ মিশিয়ে তো বেশ কেটে গেল। রেজাল্টও ভালো
হয়েছে। বন্ধুবান্ধব হয়েছে। কাজের অগ্রগতিও। টাচ উড, মন্দ চলছে না তুয়ার এই
নতুন শহরে একলাযাপন। অবশ্য কলকাতা আর যাই হোক, 'নতুন' নেই ওর কাছে। অলিতে
গলিতে অবাধ বিচরণ পুরোপুরি না হলেও, বন্ধুদের কল্যাণে মন্দ হয়নি। তাও, এখনো
অনেকটা বাকি। সামনে অনেকটা লম্বা পথ বাকি। তুয়ার পূর্ণ আস্থা আছে নিজের
ওপর। এই আগামীও খুবই আপন হবে ওর।
No comments:
Post a Comment