Monday, June 3, 2019

শহরের পাঁচালি ৯

ভবানীপুরের সরু গলির অনেকটা ভিতরে টালির চালের ঘরে একটা পুরনো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শেষবারের মত নিজের সাজ দেখে নিলো নীলাম্বরী। বা বলা চলে, মেপে নিলো নিজেকে। ঠিক যেমনভাবে প্রতিদিন মাপে ওকে হাজার হাজার "মানুষ"। অবশ্য এতে নীলাম্বরীর আক্ষেপ নেই এতটুকুও। হাজার হোক, এইভাবেই তো সংসারটা চালাতে পারছে ও।
আর পাঁচটা এমন মেয়ের সাথে নীলাম্বরীর জীবনের গল্পেও তেমন পার্থক্য নেই। সেই গরীব বাবা, অসুস্থ মা, ফ্যাক্টরি লক-আউট হওয়া ভাই। ভগবান যখনই ওকে কিছু দিয়েছেন, বেশ ঢেলে দিয়েছেন। তাই অভাব অনটনের কোন কমতি নেই।
তবে কথায় আছে না? চিনির ব্যবস্থাও চিন্তামণিই করে দেন। তা আমাদের নীলাম্বরীর এই অভাবের থেকে ক্ষণিকের মুক্তির পথও ঈশ্বর ঠিক খুঁজে দিয়েছেন। ছোট থেকেই অসম্ভব রূপের ছটা ওর। আকর্ষক চেহারা, ঝকঝকে মুখশ্রী। সাথে ভাগ্যিস টেন পাশ করে পাড়ার লোকের পাল্লায় পড়ে বেসিক স্পোকেন ইংরেজিটা শিখে ফেলেছিলো। এখন তাই নীলাম্বরী "কমপ্লিট প্যাকেজ"। বলতে নেই, আর্থিক অভাব অনেকটাই এখন আয়ত্তে এসে গিয়েছে।
চাইনিজ কোম্পানির বড় স্মার্টফোনটা বেজে ওঠে নীলাম্বরীর। অপর প্রান্তে অ্যাপ ক্যাবের ড্রাইভার। তাকে লোকেশন বুঝিয়ে কালো চকচকে হ্যান্ডব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে নীলাম্বরী। থুড়ি, বিখ্যাত এস্করট নীলা।
আজ রাতের ঠিকানা গ্র্যান্ড হোটেল। আজ আবারও কর্পোরেট ক্লায়েন্ট।
ঝলমলে নগরীর ঐতিহ্য প্রাসাদে কুহকিনীর আরো এক মোহিনী রাত্রিযাপন।

No comments:

Post a Comment