Monday, June 24, 2019

তুয়ার হিজিবিজি ১৭



মকবুলের ফেসবুক প্রোফাইল বারবার টানে তুয়াকে। সারাক্ষণ প্রোফাইল ঘাঁটতে থাকে। ছবি দেখে। পুরোনো পোস্ট দেখে। মেসেঞ্জারে আবার অনলাইনও দেখাচ্ছে। চ্যাট উইন্ডো খুলে বসে থাকে তুয়া। একবার কি হাই হেলো করবে? হেলো স্যার। লিখে আবার ডিলিট করে দেয়। একই কান্ড করে ওয়াটসআপে। বারবার চ্যাট বক্স খুলে ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। অনলাইন দেখলে একটু হার্ট বিট স্কিপ করে। কিন্তু লেখালিখি কিছুই করতে পারেনা। ক্লাসের ওয়াটসআপ গ্রুপে সবাই "ক্যামেরাম্যান"দের বারবার তাড়া দিতে থাকে ফ্রেশার্সের অনুষ্ঠানের ছবি দিতে। অবশেষে রাত দুটোর দিকে ফেসবুকে এলবাম আসে ছবির। অজস্র ছবি। প্রচুর ট্যাগ। তুয়া মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে কিছু ছবিতে। ও আর মকবুল। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। বা নাচছে। ওর স্টেজে গান গাইবার সময়ের একটা দারুণ ক্লোজ আপ ছবি তুলেছে সুনন্দ। দামী শাড়ির কারুকার্য তো বোঝা যাচ্ছেই, তেমনি সাজের পরিপাটিও ভালোই দেখা যাচ্ছে। খুব পছন্দের গয়না। সেটাও হাইলাইট পেয়েছে। সব মিলিয়ে যাকে বলে, একেবারে একশোতে একশো ছবি। ওটাকেই তুয়া ডিসপ্লে পিকচার বানালো। পরপর লোকজন লাইক কমেন্ট লাভ দিতে থাকে ছবিতে। কিন্তু তুয়া যার রিএকশনের অপেক্ষায়, তার পাত্তা নেই। প্রায় ভোর রাত অবধি অপেক্ষা করতে থাকে ও। অবশেষে ঘুমে চোখ জুড়িয়ে যায়।
সকালে উঠে তুয়া খেয়াল করে, অনেক বেলা হয়ে গেছে। ইশ। বাজারহাট করার আছে। ছি ছি। আগে কখনো এমন হয়নি। তড়িঘড়ি ও উঠে হাতমুখ ধুয়ে ছোটে বাজারে। ফোন খুলে ফেসবুক দেখা হয়নি। বাজারহাট সেরে, রাস্তার মোড়ের দোকান থেকে কচুরি জিলিপি কিনে বাড়ি ফেরে তুয়া। তারপর আয়েশ করে এক কাপ কফি বানায়। ব্রেকফাস্ট খাবে। ফোনের থেকে ফেসবুক খোলে। প্রচুর প্রশংসা ওর ছবিতে। গানের ভিডিও শেয়ার করেছে পল্লবী। সেখানেও দারুণ ভালো ভালো কথা লিখেছে লোকজন। এক দুজন স্যার ম্যামেরাও। কিন্তু মকবুলের কোনো চিহ্নমাত্র নেই। আশ্চর্য লাগে তুয়ার। তা হলে কি ও ভুল পড়ছিল মকবুলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ? অযথা আশাবাদী হচ্ছিল? না না। নিশ্চয়ই মকবুল ফেসবুক দেখেনি। তাই কোনো নোটিফিকেশন নেই। স্কলার মানুষ। সকাল থেকেই থোড়াই এইসব করবে? নিজেকে সান্ত্বনা দেয় তুয়া। পরমুহূর্তেই নজরে আসে। এলবামের কিছু কিছু ছবিতে লাইক পড়েছে বই কি। মকবুলের। তাহলে? বিমর্ষ বোধ করে তুয়া। ফ্রিজ থেকে একটা চকোলেট বের করে খায়। শুনেছে, ডার্ক চকলেট খেলে মন ভালো হয়। গিনিকে মেসেজ করে। জানায় সব কথা। গিনি বুঝে পায় না কী বলবে।
ঠিক তক্ষুনি মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ ঢোকে। মকবুলের। "পাখীর নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।"
তুয়া থমকে যায়। কী লিখবে এর উত্তরে, ভেবে পায়না। আবার মেসেজ আসে উল্টোদিক থেকে।
"অপূর্ব লাগছে এই ছবিতে তোমায়। অবশ্য তুমি সব সময়েই সুন্দর। আসলে মূল পোস্টে কমেন্ট করলে তোমারই বন্ধুবান্ধব, বিশেষ করে ক্লাসমেটরা কিছু মনে করতে পারে, তাই ওখানে কিছু বলিনি। আলাদা করে লিখলাম।"
তুয়ার হাত কাঁপে। একলা ঘরে বসে লজ্জায় রাঙা হয়। কিছু লিখতে পারে না উত্তরে। তাকিয়েই থাকে লাইন কটার দিকে। এই কবিতা তো কত কত বার ও পড়েছে। মুখস্থ। কই, এমন অনুভূতি তো আগে হয়নি। এ অনুভূব একদম অন্য রকম। আলাদা ভালো লাগা। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে থাকে। সবে ভদ্রতা ও সৌজন্যমূলক ধন্যবাদ লিখতে যায়, আবার মকবুলের মেসেজ আসে। "আই এম সরি। বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে প্লিজ ক্ষমা করে দিও।"
তুয়া ঝটপট লেখে, " না না ঠিক আছে। থ্যাংক ইউ। কমপ্লিমেন্ট পেয়ে আমি অভিভূত।"
মকবুল শুধু একটা স্মাইলি পাঠায়। তারপর লেখে, "হ্যাপি সানডে। কাল ক্লাসে দেখা হচ্ছে। আমি একটু কালকের প্রিপারেশন নিই। সি ইউ।"
তুয়া "বাই" লেখে।
ক্লাসের ওয়াটসআপ গ্রুপে চোখ দেয়। চলছে ছবি নিয়ে চর্চা। মেয়েরা মকবুলকে নিয়ে বিগলিত। কার কোন ছবিতে লাভ দিয়েছে, কমেন্ট করেছে, সেই নিয়ে সব উড়ছে। তুয়া হাসে। মনে মনে।
তারপর আবার মেসেঞ্জার খোলে। এখনো গ্রীন লাইট অন। বারবার পড়তে থাকে ওই কটা লাইন।

No comments:

Post a Comment