Sunday, June 9, 2019

তুয়ার হিজিবিজি ৫

রবিবার। বাকি লোকজনের জন্য এই দিনটা খুব আনন্দের হলেও তুয়ার কাছে এটা সবচেয়ে খাটাখাটুনির দিন। সারা সপ্তাহের বাজার করা চারটিখানি কথা না। তার ওপর জামা কাপড় কাচাকাচি এসব তো আছেই। তবে একটা কাজ যেটা খুব পছন্দ করে তুয়া সেটা হলো ওর টুকরো বারান্দাটাতে গাছপালার পরিচর্যা। প্রতিদিন সকালে গাছে নিয়মিত জল দিলেও, যত্ন আত্তি হয় এই একটা দিন। ছোট্ট এক ফালি বারান্দা। তাতেই টবে টবে ভরিয়ে দিয়েছে তুয়া। রঙ বেরঙে বাহারি সমস্ত টব। কোনো কোনটা আবার ঝুলছে গ্রিল থেকে। মানি প্লান্ট, চাইনিজ টগর, তুলসী, এলো ভেরা, মর্নিং গ্লোরি, নয়নতারা, দোপাটি - এসব আছেই। তার সাথে আবার লঙ্কা গাছ। নিয়মিত লঙ্কা হয়। তুয়া জেঠিমাদের দেয়। নিজে খায়। এবার ভেবেছে বর্ষায় একটা লেবু গাছের চেষ্টা করবে। সারাদিনের ব্যস্ততার শেষে বা সক্কাল সক্কাল, যে কোনো সময় এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে বড্ড ভালো লাগে।
সারা সপ্তাহে মোটামুটি কী কী রান্না বান্না করাবে, তার একটা মোটামুটি ধারণা করে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বেরোয় তুয়া। সমবয়সীরা সুপার মার্কেট শপিং মল থেকে বাজার করলেও তুয়া এখনো সাধারণ পাড়ার বাজার থেকে কেনাকাটা করতেই ভালোবাসে। হাঁটু গেড়ে বসে সবজি চিনে চিনে বাছাই করে কেনা, কানকো টিপে মাছ কেনা এসবে আলাদা মজা। ছোটবেলা থেকেই রবিবার রবিবার বাবার হাত ধরে পাড়ার বাজার থেকে কেনাকাটা করতে যেত তুয়া। সেই অভ্যেসটা এখনো রয়ে গেছে। আর মোটামুটি এই বাজারের যারা ক্রেতা, তাদের তুলনায় তুয়াই সর্ব কনিষ্ঠ। তাই বাজার কাকুরা সবাই ওকে খুব খাতির যত্ন করে। মোটামুটি ভালো শাক, সবজি সব ওর জন্য আলাদা প্যাক করা থাকে। ফল কিনতে অবশ্য তুয়া ভালোবাসে না। এই সুন্দর ফলের মরসুম। বাজার ছেয়ে গেছে আম জাম জামরুল লিচুতে। কিন্তু তুয়ার সেসবে ঠিক ঝোঁক নেই। তাও মাঝে মাঝে কিনে ফেলে।
বাজার করে ফিরতে গিয়ে বাড়ির সামনেই দেখা হয়ে গেল ভুলুর সাথে। ধবধবে সাদা গায়ের রঙ। মধ্যে মধ্যে খয়েরি ছোপ। তুয়াকে দেখলেই খালি ল্যাজ নাড়তে থাকে। তুয়ার সাথে এত ভাবের কারণ আছে অবশ্য। দেখলেই বিস্কুট, রুটি কিছু না কিছু খাওয়াবেই খাওয়াবে। বিস্কুট দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে তুয়া বলে, " হ্যাঁ হ্যাঁ বাবু। আজ রবিবার স্পেশাল চিকেন কারি ভাত দেবো। দেড়টা নাগাদ চলে আসবি। ঠিক আছে সোনা?" ভুলুকে দেখলেই পাড়ার কালু লালুদের কথা মনে হয়। ওদের যে ভালোবাসতো, সেই ভালোবাসার পাত্র এখন ভুলু।
আস্তে আস্তে তুয়া গেট খুলে বাড়ি ঢোকে। কলকাতার রবিবারগুলো আসানসোলের মতো পুরো এক না হলেও, এই সব ছোট ছোট ব্যাপারে সেই সাবেকিয়ানা বজায় রেখেছে। এইটুকুই প্রাপ্তি।

No comments:

Post a Comment