সারাদিন কোন কাজ ছিল না। জাস্ট কোন কাজ না। অথচ অফিসটার নিয়ম এমন দেখো, ইন্টার্নদের সেই সকাল ৯টায় ঢুকতে হবে। বেরোতে বেরোতে সাতটা। আরে বাবা, কাজ করতে মোটেই খারাপ লাগেনা তুয়ার। কিন্তু এই বিনা কারণে বসে থাকা। বড্ড বিরক্তিকর। বাকি ক্লাসমেটগুলো সব কী সুন্দর কলকাতায় বাড়ি। তাই পরীক্ষার পরে ইন্টার্নশিপও করছে, এদিকে বাড়ির আরামে আছে। তুয়ার বাড়ি আসানসোল। পরীক্ষা শেষ হলেও এই আড়াই মাস মেসেই পড়ে থাকতে হচ্ছে। আজ আবার ছুটির দিন অফিশিয়ালি, কিন্তু শ্রীলেখা ম্যাম নিজে আসবেন কাজে, তাই ওকেও আসতে হলো। ম্যাম অন্যান্যদিন তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যান, ছোট বাচ্চা আছে বাড়িতে, তাই। ছুটির দিনগুলোতেই যত কাজ মনে পড়ে। আর যেহেতু তুয়া ওঁর সুপারভিশনে কাজ করে, তাই ওকেও থাকতেই হয়। আজ কী অসম্ভব ভালো ওয়েদার, সারাদিন জানলার বাইরে হাঁ করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে আর আফসোস করেছে তুয়া। এমন দিনে কোথায় পার্কে ঘুরে বেড়াবে, রাজপথ ধরে হাঁটবে, হুঠহাঠ ফুচকার লাইনে দাঁড়িয়ে পড়বে, গঙ্গার ঘাটে গিয়ে বসে থাকবে। তা না। নিকুচি করেছে এই ইন্টার্নশিপ। ছেড়ে দেবে। ভালো লাগেনা একা একা এখানে পড়ে থাকতে। ইচ্ছে করছে এক ছুট্টে গিয়ে মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে শুতে। আর বলতে, "আজ খিচুরি ডিম ভাজা?" মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলবে, "বেশ তো। বাবাকে বলে দিই। একটু পাঁপড় নিয়ে ঢুকুক।"
আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে তুয়া লোহার গেটটা ঠেলে ঢোকে ওর এই পায়রার খুপরিতে। সিঁড়ির আলোগুলো জ্বালতে জ্বালতে উঠে যায় দোতলায়, ওর কুঠুরিতে। আটটা বেজে গেছে। একতলা থেকে জেঠিমাদের রান্নাঘর থেকে ছ্যাঁকছোক শব্দ আসছে। গন্ধে মনে হচ্ছে বেগুনি, তেলেভাজা। নির্ঘাত খিচুরিও হয়েছে, বা হবে। ফোনটা হাতে নিয়ে তুয়া অ্যাপ খুলল। আশেপাশে যদি কোন রেস্টুরেন্ট খিচুরি বিক্রি করে, তাহলে অর্ডার দেবেই। উঁহু। খানিক দেখে টেখে কিছুই তেমন পাওয়া গেলো না। তাহলে কি নুডলস অর্ডার দেবে? ঝাল ঝাল... মন্দ লাগবে না ওয়েদারে। এমন সময় কড়কড় শব্দে বাজ পড়লো জোরে। কাছেই। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বৃষ্টিটা নামলো বলে। থাক, এই ওয়েদারে আর কাউকে রিস্ক নিয়ে এসে ওর খাবার ডেলিভারি করতে হবেনা আর। স্টকে ম্যাগি আছে। সেই বানিয়ে খাবে নাহয়। ইচ্ছেগুলোকে সব সময় কি আর সায় দেওয়া যায়? নিজের মনেই হাসে তুয়া। মা ঠিকই বলে। একলাযাপন ওকে বড় করে দিয়েছে অনেকটা।
No comments:
Post a Comment