Wednesday, June 12, 2019

তুয়ার হিজিবিজি ৭



ঠিক নিয়মমাফিক দুটো নাগাদ মায়ের ফোন এলো। তুয়া কাজে হাবুডুবু খাচ্ছে। একবার ফোনটা বেজে বেজে থেমে গেলো। ও রিসিভ করলো না। আর একবার বাজলো। এবারও ধরলো না। পাশ থেকে দীপান্বিতা বললো, "কীরে, ধর? কাকিমা তো?" তুয়া মাথা নাড়লো। "এখন নিশ্বাস ফেলার সময় নেই। মা খালি খাওয়া নিয়ে বলবে।" দীপু কিছু বললো না। একটু কাঁধ ঝাঁকিয়ে নিজের ডেস্কে ফিরলো। তুয়া কাজে মন দিলো। মায়ের ফোন আর আসেনি। এটা ওর খুব কমন ব্যাপার। মা পরে বিকেলে আবার ফোন করবে। তখন তুয়া খায়নি শুনে বকুনি দেবে। কিন্তু ওর কিছু করার নেই। শ্রী ম্যাম এত কাজ চাপিয়ে দিয়েছে। সকালে যেই গেল, অমনি ম্যাম এক বান্ডিল ফাইল ওকে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, " শোনো, এতে সমস্ত পাঠকদের পাঠানো চিঠি আছে। দেখো এখান থেকে ঝাড়াই বাছাই করে গোটা পনেরো বের করো। বর্তমানের সাথে যা রেলভেন্ট। সেগুলো আগামী সংখ্যায় ছাপা হবে। " তুয়া একটু অবাক। সাধারণত এইসব কাজ শ্রী ম্যাম নিজেই করেন। বলেন, পাঠকের চিঠির কোয়ালিটি নাকি অনেকটাই ম্যাগাজিনের কোয়ালিটির মাপকাঠি। কাজেই ঠিকমতো বেছে চিঠি ছাপা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বহু মান্ডে মিটিংয়ে এই কথা ও শুনেছে। ইন্টার্নশিপের দু মাসের মধ্যেই এমন গুরু দায়িত্ব। খুশি তো হয়েছে। তবে সাথে একটু বুক দুরদুরও করছে। বিকেলের মধ্যে রেডি করে দিতে হবে। ওর বাছা পনেরো থেকে ম্যাম পাঁচে নামাবেন। তুয়াকে rank দিতে হবে চিঠিগুলো। ম্যাম বলেছেন, যদি দুজনের চয়েস মোটামুটি মিলে যায়, তাহলে কফি ট্রিট। যদিও কফি খাওয়ার জন্য তুয়া লালায়িত না, তাও, শ্রীময়ীকে ও খুব ভক্তি শ্রদ্ধা করে। তাই ম্যামের গুড বুকসে থাকতে সদা ইচ্ছুক।

সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ম্যামকে লিস্ট দিয়ে একটু করিডোরে দাঁড়িয়ে তুয়া মায়ের সাথে কথা বললো। খেয়াল করেনি, পাশ দিয়ে একবার শ্রী ম্যাম গেলেন। কে জানে, ওর কথা শুনলেন কি না। সাতটায় একবার ডাক পড়লো ম্যামের ঘরে। বেশ প্রশংসা করলেন তুয়ার কাজের। আড়াই মাসের ইন্টার্নশিপের পক্ষে খুবই নাকি স্যাটিসফ্যাক্টরী পারফরমেন্স। আর ফাইনাল ভারডিক্ট? ম্যামের পাঁচের সাথে তুয়ার তিনটে মিলে গেছে। তুয়া বেরোতে যাচ্ছে ঘর থেকে, ম্যাম বললেন, " সারাদিন তো কিছুই খাওনি? চলো, ক্যাফেটেরিয়া। কিছু খেয়ে নেবে। আমারও কফি তেষ্টা পাচ্ছে।" তুয়া অবাক হয়ে তাকালো। শ্রী বললেন, "ভাবছো কী করে জানলাম? আরে, তখন ফোনে কথা বলছিলে, শুনেছি। আর শোনো, মায়ের ওপর ওই বকাবকি করো না। মা তো ঠিকই বলেন। কাজ থাকবেই। তা বলে শরীরের যত্ন নেবে না? উঁহু। কর্পোরেট লাইফে টিকতে গেলে মন ও শরীর দুইই শক্ত পোক্ত করতে হবে তো। ব্যালেন্স রেখে চলবে। অলওয়েজ। বুঝেছো?"
তুয়া একটু হেসে মাথা নাড়ে। শ্রী ম্যামের থেকে ও আজ পেলো একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ লাইফ লেসন। ওকে সব সময় মেনে চলতেই হবে। এই রেসে সারভাইভ করতে হবে তো!

No comments:

Post a Comment