যতই রাত করে ঘুম আসুক না কেন, ঘড়ি ধরে ঠিক সাড়ে ছটায় তুয়া উঠে পড়বেই। ফোনে অ্যালার্ম দেওয়া আছে ঠিকই, কিন্তু বায়োলজিকাল ক্লকের ওসব লাগেনা। নইলে প্রতিদিন সকাল সকাল উঠে মোবাইলটা হাতে নিয়ে কখনো রোজ ঠিক ৬ঃ২৩ই বাজে? একটুও অন্যথা হবে না? তবে এ অভ্যেসের জন্য দায়ী ওর দীর্ঘ চোদ্দ বছরের মর্নিং স্কুল। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা, সাড়ে পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে দৌড়াদৌড়ি করে ঘুম চোখে নীল সাদা লজঝরে স্কুলবাসে চেপে হন্তদন্ত হয়ে মর্নিং আসেম্বলিতে "মঙ্গল দীপ জ্বেলে" গাওয়া। এইভাবেই হয়ে যেত ওর রোজের গানের রেওয়াজ। আজকাল আর গান গায়না তুয়া। গান যে খুব ভালোবেসে গাইতো, এমন কথা বলা যায়না। বরং মাকে রীতিমতো বকাঝকা করেই সন্ধ্যেবেলা হারমোনিয়াম নিয়ে বসাতে হত। পাশের বাড়ি থেকে মৃন্ময়ী কাকীমার সন্ধ্যে দেওয়ার শাঁখের শব্দই হতো সেই সিগ্নাল। এইবার বাপু খেলা থামিয়ে ঘরে এসো, মা অপেক্ষা করছে। নইলে কপালে দুঃখ আছে। আজকাল তুয়ার জীবন থেকে কী করে কে জানে গান হারিয়ে গিয়েছে। দিন রাত কানে ইয়ারফোন গুঁজে কাজের ফাঁকে ফাঁকে গান চলতে থাকে বটে, তবে সেসব গানের সুরে বা কথায় তেমন মনোযোগ দেওয়া হয়না। এমন নয় যে তুয়া প্রাচীনপন্থী, হালফিলের গান মানেই বিশ্রী, এমন মনোভাব। একদমই না। আজকাল কত সুন্দর সুন্দর গানও হয়। শুনেওছে তুয়া। কিন্তু কিছুতেই যেন আর আগের মতো আনন্দ পায়না। গাইতেও ইচ্ছে করেনা। কতদিন স্টেজে অনুষ্ঠান করেওনি, দেখতেও যায়নি। অভ্যেস।
ইলেক্ট্রিক কেটলিতে খানিকটা গরম জল করে, তাতে লেবুর রস আর মধু মিশিয়ে খাওয়ার হ্যাবিটটা মা তৈরি করে দিয়েছে। এত সর্দি কাশিতে ভোগে, তাই একটু ন্যাচারাল সোর্স অফ ভিটামিন সি। খেতে খুব একটা ভালো লাগেনা। কিন্তু ওই যে, অভ্যেস। উপকার পায় বলেও তো মনে হয়না। একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই হ্যাচ্চো হ্যাচ্চো শুরু হয়ে যায়। তবুও রোজ নিয়ম করে আলসেমি কাটিয়ে জলটা গরম ও করবেই। কোন কোন দিন ইচ্ছে হয় একটু বিদ্রোহ করে, খাবে না। জল গরম করবে না। করলেও ফেলে দেবে। তবে পর মুহূর্তেই মনে পড়ে, একটু পরেই মা ভিডিও কল করবে। হাতে কাঁচের গ্লাসে লেবুর জল না দেখলেই প্রশ্ন করবে। মিথ্যে কথা তুয়া বলতে পারেনা। তাই মা জেনেই যাবে। তারপর মা বকা দেবে। শুরু হবে এক প্রস্থ "আমি দূরে আছি বলে যা ইচ্ছে করে নে। শরীরের যত্ন নিতে হবে না আর। অসুখ করলে কে দেখবে?" ইত্যাদি ইত্যাদি। সক্কাল সক্কাল এসব আর ভালোই লাগেনা। তার চেয়ে চুপচাপ খেয়ে নাও। তিতো বড়ির মতো। শান্তির বড়ি।
No comments:
Post a Comment