আজ গিনির জন্মদিন। গিনি, মানে তুয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। সেই ছোটবেলা থেকে ওরা বন্ধু। সেই সূত্রে ওদের মায়েরা বন্ধু, বাবারা বন্ধু। গিনি থাকে সিডনিতে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গিয়েছে। তুয়া এসেছে কলকাতা। দুই বন্ধুর মধ্যে অবশ্য ভৌগোলিক দূরত্বটা বাড়াবাড়ি হলেও, ভাগ্যিস মনের দিক থেকে এখনও ওরা পড়শী। রাত বারোটা বাজতেই, প্রতি বছরের মতোই গিনিকে ফোন করলো তুয়া। এবং দুটো রিং হতেই মনে হলো, "এই রে, এখন তো ওদের সবে ভোর সাড়ে পাঁচটা। ঘুমাচ্ছে নির্ঘাত। রেখেই দিই। সকালে উঠে ফোন করবো।" ফোনটা সবে কাটতে যাবে, ঘুম জড়ানো গলায় গিনি বলল, "বল তুয়াপাখী।" এক লহমায় তুয়ার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। "তুয়াপাখী"। নামটা এত মিষ্টি লাগে শুনতে। তুয়া একটু বেশিই রোগা। বাকি বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনরা যখন এই নিয়ে ওকে বারবার কিছু না কিছু উপদেশ দিতে থাকে, একমাত্র গিনিই ওকে সান্ত্বনা দেয় আর বলে, "আরে, চাপ কী? সবাই হাতি গন্ডার হলে ইকো সিস্টেম ব্যালেন্স কে মেন্টেন করবে? তুই নাহয় পাখীই হলি। আমার তুয়াপাখী।" গিনিটা খুব সমঝদার। কখন কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হবে, আদব কায়দা সবেতে এক্সপার্ট। তুয়া আবার ঠিক তার উল্টো। ঠিকমতো গুছিয়ে কথা বলতে পারে না, এমন না। তবে যথা সময়ে কথাগুলো আসে না মাথায়। ফলে প্রচুর আফসোস। প্র্যাক্টিকাল সমস্যার সমাধানের জন্যও তুয়া বরাবর গিনির দ্বারস্থ হয়। সব মিলিয়ে, গিনি এক্কেরে তুয়ার ফে ফি গা, অর্থাৎ, ফ্রেন্ড ফিলোজফার গাইড।
"এই সরি, আমার একদম মাথায় ছিল না টাইম জোনের ব্যাপারটা। তোর কাঁচা ঘুম ভাঙ্গালাম।" তুয়া একটু লজ্জিত কন্ঠেই বলে।
"ওরে ইডিয়ট, অন্তত আগে উইশটা তো করবি!" গিনি মৃদু ধমক দেয়।
"হ্যাপ্পপ্পপি বার্থডে গিনি। আনন্দে কাটুক বছরটা। খুব খুব এঞ্জয় কর। আজকের পার্টিটা ডিউ রইলো।"
"অবশ্যই। এখানে দু একটা বন্ধুবান্ধব যা জুটেছে, ওদের সাথে আজ সেলিব্রেশনের প্ল্যান আছে ঠিকই।"
"কে কে? মার্ক? আহেম" তুয়া গিনিকে মাঝ বাক্যে আটকে দিয়ে বলে।
"এক মা খাবি মার্কের চ্যালা কোথাকার। কথা শেষ করতে দে।" গিনি আবারও বকে দেয়।
এ ওদের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
দুজনেরই ভালো লাগে। একে অপরকে শাসন করতে। সহায় হতে। ওরা দুজনে যেন মায়ের পেটের বোন, এমন মিলমিশ ওদের।
আরো খানিক টুকটাক গল্প করে তারপর ওরা ফোন ছাড়ে। তুয়াকেও এবার শুতে হবে। কাল অফিসে একটু হেক্টিক আছে। শ্রীময়ী ম্যামের সাথে কাল একটা ইন্টারভ্যু শুটে যেতে হবে। গিনিও হয়তো আর ঘন্টাখানেক ঘুমিয়ে কলেজ যাবে। ওদের এখন শীত যাবো যাবো করছে। দারুণ ওয়েদার। তুয়ার খুব ইচ্ছে হয়, একবার গিনির কাছ থেকে ঘুরে আসবে। মে মাসে ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপবে। ভারি মজা। গিনি থাকতে থাক্তেই যেতে হবে। টাকা জমানো শুরু করে দিয়েছে ও তাই।
সকালে ঘুম ভাঙল সেই ৬ঃ২৩এই। হাত মুখ ধুয়ে লেবুর জল বানিয়ে একবার ওর পুঁচকি বারান্দায় এসে দাঁড়ালো তুয়া। নীচে দুই মা দাঁড়িয়ে, সাথে তাদের দুই ছানা। মায়েরা ওদের শান্ত হয়ে দাঁড়াতে বলছে, বাস এসে যাবে এক্ষুণি। ওরা কে শোনে কার কথা। দুটিতে দৌড়াদৌড়ি করে যাচ্ছে। কী মিষ্টিই যে লাগছে ওদের দেখতে, তুয়া ভাবে। ঠিক যেন বছর বারো আগের তুয়া আর গিনি। সেই ভোরের বাস স্ট্যান্ড, কালারম্যান, কুমির ডাঙ্গা খেলা। ওদের অবশ্য দল ছিলো আরো বড়। মোহনা, চাঁদনী, দোলন। তখন এত গলায় গলায় ভাব, এদিকে এখন দেখো, কারুর সাথেই আর যোগাযোগ নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুয়া। নাহ, আবার আস্তে আস্তে সব্বাইকে খুঁজে নিতে হবে।
No comments:
Post a Comment