Friday, June 14, 2019

তুয়ার হিজিবিজি ১০

আজ তুয়ার এই অফিসে ইন্টার্নশিপের শেষ দিন। তবে কাজের ছুটি কিন্তু না। আজও শ্রীময়ী ওকে ভালো মতোই এসাইনমেন্ট দিয়েছেন। এই মাসের ম্যাগাজিনের ফাইনাল লে আউট আর প্রুফ দেখার। শ্রীময়ী খুব খুঁতখুঁতে এইসব বিষয়ে। আর এ যাবৎ মোটামুটি ভালো ট্র্যাক রেকর্ড বজায় রেখে এসেছে। তাই জন্যই তো এই শেষবেলায় এসেও এমন গুরুগম্ভীর দায়িত্ব ওর ঘাড়ে পড়েছে। আজকেও কাজটা সুষ্ঠুভাবেই মেটাতে চায় তুয়া। তাই মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপ খুলে বসে আছে। সাড়ে দশটার দিকে মনিরুলদা এসে রোজের মতোই কফির কাপ ধরিয়ে দিয়ে গেল ওকে। তুয়া কৃতজ্ঞ হাসি হাসলো। মনিদা এত ভালো কফি বানান, এটাও খুব মিস করবে তুয়া। সাড়ে বারোটার দিকে এইচ আর ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা মেসেজ পেলো ও। বিকেল পাঁচটায় ওর জন্য একটা ছোট ফেয়ারওয়েলের ব্যবস্থা হয়েছে। ও যেন অবশ্যই আসে। মুহূর্তে তুয়ার মনটা অদ্ভুত মিশ্র অনুভূতিতে ভরে গেল। বিদায়ের কষ্ট। এদিকে এতটা ভালোবাসা পাওয়ার আনন্দ।
সময়মতো দীপান্বিতা ওকে নিয়ে ক্যাফেটেরিয়া এলো। দীপুর অবশ্য ছ'মাসের ইন্টার্নশিপ। ও এক্ষুণি যাচ্ছেনা। তাই জুনিয়রমোস্ট হিসেবে ওর আজ অনেক দায়িত্ব। গোটা ফেয়ারওয়েলটা ও আর এইচ আরের কিছু ইন্টার্নরা মিলে আয়োজন করেছে। গোটা ক্যাফেটেরিয়া বেলুন দিয়ে সাজানো। ওর পছন্দের নীল আর লাল কম্বিনেশনে। স্পিকারে গান চলছে। পার্টি মিউজিক। যথাসময়ে সব লোকজনও এসে উপস্থিত। শোভন স্যার ফ্রিজ থেকে একটা ইয়া বড় কেক বের করে আনলেন। দীপুকে ডেকে বললেন, "নে। আমার কাজ করে দিয়েছি। এবার ঝটপট শুরু কর।" যেন এই সিগ্নালেরই অপেক্ষায় ছিল ওরা। এইচ আরের ইন্টার্ন দেবাদিত্য হাত ধরে তুয়াকে কেকের সামনে নিয়ে এলো। জুনিয়ররা মিলে হইহই করতে করতে কেক কাটালো তুয়াকে দিয়ে। প্রথম পিসটা তুয়া ওর প্রিয় শ্রীময়ী ম্যামকেই খাওয়ালো। ম্যাম অল্প একটু কামড় দিয়ে বাকিটা ওর মুখের পুরে দিলেন। এরপর একে একে তুয়া বাকি ইন্টার্ন ও অন্যান্য স্টাফদের কেক কেটে দিলো। দীপু এই ব্যাপারে সাহায্য করলো খুব। গান বাজনার ভলিউম বেড়ে গিয়েছে। হালকা নাচ শুরু হয়েছে একদিকে। তুয়া লাজুক। ও চুপ করে বসে আছে একটা কোণায়। ওর জন্যই এই পার্টি, এদিকে ও আড়ালে। মনিরুলদা ট্রে হাতে সবার জন্য একে একে কোল্ড ড্রিংক আর স্ন্যাকস নিয়ে এলো। তুয়া চুপচাপ বসে। মাঝে মাঝে কেউ কেউ এসে ওর পিঠ চাপড়ে দিয়ে যাচ্ছে।
আটটার দিকে পার্টি ভাঙল। এবার সবার ফেরার পালা। তুয়া অনেক উপহার পেয়েছে। অফিস থেকে ওকে বেশ কতগুলো বই, একটা পেনড্রাইভ, একটা ব্লু টুথ হেডফোন তো দিয়েইছে, এ ছাড়া বন্ধুরা, মানে ব্যাচের অন্যান্য ইন্টার্নরা মিলে ফুলের তোড়া আর হ্যান্ডব্যাগ দিয়েছে। এত কিছু নিয়ে বাড়ি ফিরবে কী করে, ভাবছে। এমন সময় শ্রীময়ী ম্যাম ওর কাছে এসে বললেন, "দীপান্বিতা বা কেউ কি তোমায় পৌঁছে দেবে?" তুয়া না তে মাথা নাড়লো। শ্রীময়ী তখন বললেন, "ঠিক আছে। আমি তোমায় আজ ড্রপ করে দেবো। বাড়ি পৌঁছনোর তাড়া আছে?" তুয়া ওর দশটার কারফিউয়ের কথা বলতে ম্যাম বললেন, "ও ঠিক আছে। ম্যানেজেবল। চলো আমরা আজ একসাথে ডিনার করি। তুমি ইন্টার্নশিপে খুব ভালো কাজ করেছো। ইউ ডিজার্ভ আ ট্রিট। বলো কী খাবে, চাইনিজ না থাই নাকি মোগলাই?" তুয়া একটু কিন্তু কিন্তু করছে দেখে শ্রীময়ী ওর কাঁধে হাত রেখে বললেন, "শোনো, ডোন্ট হেজিটেট। এখন কিন্তু আমি আর তোমার বস নই। আমায় দিদির মতোই ভাবতে পারো।"
সেদিন ওরা একটা থাই রেস্টুরেন্টে ডিনার সারলো। তুয়ার বাড়ির কাছেই। খেতে খেতে অনেক গল্প হলো। ডিনার শেষে তুয়া যেন অনেকটাই সহজ। যেন শ্রীময়ীকে এক নতুন রূপে পেলো। একজন প্রিয় সিনিয়র, একজন মেন্টর। ঠিক বাড়ির সামনে ওকে নামিয়ে দিয়ে গেলেন। তুয়া ফিরে শ্রীময়ীকে গুডনাইট জানাতে গেলে, শ্রীময়ী বললেন, "স্টে ইন টাচ। আমি যেখানেই জয়েন করি না কেন, তোমার জন্য ইন্টার্নশিপের দরজা সবসময় খোলা। আর কখনো কোনো প্রয়োজন হলে, নির্দ্বিধায় আমায় ফোন করবে। ঠিক আছে?"
এই আশ্বাসটুকুই অনেকটা। তুয়া মনে মনে ভাবে, আড়াই মাস বাড়ি না যাওয়ায় অনেক কিছু মিস হলেও, এগুলোই তো ওর প্রাপ্তি, থেকে যাবে সর্বক্ষণ।

No comments:

Post a Comment